ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকার ১৮ ওয়ার্ড, বহুতল ভবনে ঘনত্ব বেশি
২৮ মে ২০২৪ ১৬:২৩
ঢাকা: রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ড রয়েছে ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে। এসব ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়েও বেশি। এই ঝুকিঁপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর বহুতল ভবনেই ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার মশার ঘনত্ব সর্বোচ্চ ৪২.৩৩ শতাংশ পাওয়া গেছে। এরপরই স্বতন্ত্র বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশার লার্ভার হার পাওয়া গেছে ২১.৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেঙ্গুর প্রাক মৌসুম জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।
প্রতিষ্ঠানটির রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীনে গত ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত চালানো প্রাক-বর্ষা জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বর্ষা পূর্ববর্তী জরিপের এই ফলাফল উদ্বেগজনক বলছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এবারের বর্ষা মৌসুম পূর্ববর্তী জরিপে মশার যে উপস্থিতি পাওয়া গেছে তা গত বছরের জরিপের চেয়ে বেশি বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরে আয়োজিত মৌসুম পূর্ব এডিস সার্ভে-২০২৪ এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। স্বীকৃত এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে মনে করা হয়।
এদিন এডিস সার্ভে ফলাফল প্রকাশ করে জানানো হয়, দুই সিটি করপোরেশনের ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এই এলাকাগুলো ডেঙ্গুর বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
এক নজরে জরিপের সংক্ষিপ্ত ফলাফল
দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৩১৫২টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। এর মাঝে ৪৬৩টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। তার মধ্যে বহুতল ভবন ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, স্বতন্ত্র বাড়ি ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবন ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়ি ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও খালি জায়গা ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়াও দক্ষিণ সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রতিবছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মৌসুম পূর্ব, মৌসুম, মৌসুম পরবর্তী তিনটি জরিপ পরিচালনা করে আসছে। তারই অংশ হিসেবে অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কীটতত্ত্ববিদদের ২১টি টিমের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ১৮ ওয়ার্ড
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো– ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭, ৩৩নং ওয়ার্ড।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো– ৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭, ২৩নং ওয়ার্ড।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ১৩নং ও ২০নং ওয়ার্ড, এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। ৩৬নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১নং ও ৩২নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭নং ও ৩৩নং ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ঢাকার সবচেয়ে বেশি ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৪নং ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২নং ও ৫৪নং ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এছাড়াও ৩নং, ৫নং, ১৫নং, ১৭নং এবং ২৩নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
জরিপ পদ্ধতি
উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৯৯টি ওয়ার্ডে ২১টি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। প্রতি ওয়ার্ড ৮টি ব্লকে ভাগ করে দুটি টিম ৪টি ব্লকে ১৫টি করে প্রতি ওয়ার্ডে ৩০টি বাড়িতে জরিপ পরিচালনা করেন। ১০ দিনে ৯৯টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩১৫২টি বাড়িতে সার্ভে করা হয়। তাছাড়া যেসব ওয়ার্ডে বাড়ির সংখ্যা বেশি ও এলাকা বড় সেগুলোতে তিন থেকে পাঁচটি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এসে প্রাণহানি বাড়ায় এবার স্ব স্ব জেলায় চিকিৎসা নেবার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রাণহানি এড়াতে বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বিত চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/এসবি/এনইউ