Sunday 27 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৃষ্টি থামলেও আজও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি রাজধানীবাসীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ মে ২০২৪ ২১:২০

ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় সোমবার (২৭ মে) বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর প্রভাবে শহরজুড়েই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অনেক জায়গায় একবেলাতেই পানি সরে গেলেও কিছু কিছু এলাকার সড়কে আজও পানি জমে আছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এলাকাবাসী।

সবচেয়ে বিপাকে আছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নতুন ১৮ ওয়ার্ডের উত্তরখান, দক্ষিণখান, রানাভোলা এলাকার বাসিন্দারা। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি। আর এই পানি পার হয়েই যাতায়াত করছেন তারা। পরনের পোশাক গুটিয়ে হেঁটেই পার হওয়া লাগছে। কারণ আগে থেকে চলমান রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে মূল উত্তরা বা এয়ারপোর্টের কাছাকাছি এসে তবেই চলাচলের রাস্তা পাচ্ছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হিল্লোল জানান, উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের কাছাকাছি অবস্থিত রানাভোলার পর ধরেঙ্গার টেক নামক এলাকা। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত এই এলাকায় কোন ড্রেনেজ সিস্টেম বা সঠিক রাস্তা-ঘাট তৈরি হয়নি। ফলে এখানে ১০ মিনিট বৃষ্টি হলেও কোমড় সমান পানি হয়। এরসঙ্গে ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাস্তা কাটাকাটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই আছে। রাস্তা চারদিক এমনভাবে কাটা হয়েছে যে এলাকার ভিতর থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ভিতরে যাওয়ার একটা পথও নেই।

তিনি বলেন, এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে। অথচ এটা নিয়ে কোথাও কোন রিপোর্ট হয় না। না পেপারে না টিভিতে। আমার স্কুলটা ঐ এলাকায় যা দশ মিনিট বৃষ্টি হলে তিনদিন বন্ধ রাখতে হয়। এলাকার মানুষ ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত হাটু পানি পার হয়ে অফিসে বা বিভিন্ন প্রয়োজনে বের হয়। যুগ যুগ ধরেই বিশাল এই এলাকার দুর্গতি চলছে।

বিজ্ঞাপন

একজন ভুক্তভোগী জানান, মেরুল বাড্ডার-নিমতলী, আনন্দনগর, বৈঠাখালী, আলিফনগর, মূল রাস্তা খোঁড়াখুড়ি চলছে। একদিনেও পানি না সরায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। অনেকেই সড়কের গর্তে পড়ে আহত হচ্ছেন। মঙ্গলবার (২৮ মে) সকালেও রিকশা উল্টে গেছে। এছাড়া ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের দিকে টেকপাড়া এলাকায় টিনশেড ঘরগুলোতে পানি উঠে গেছে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা সেতু বলেন, পুরান ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় ইদানিং কম সময়ের জন্য জলাবদ্ধতা তৈরি হয় যেটা আগে লম্বা সময় থাকতো। তবে বক্সিবাজারের জলাবদ্ধতা কোনো কালেই কমল না।

একই অবস্থা মধুবাগ এলাকায়। হাতিঝিলের মধুবাগ ব্রিজ থেকে একটু সামনে এগিয়ে অন্তত এক কিলোমিটার এলাকায় পানি জমে আছে। প্রায় একদিন পার হয়ে গেলেও সরেনি সেই পানি। সরেজমিনে দেখা গেছে রাস্তা তুলনামূলক ভালো হওয়ায় রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করলেও স্থানীয়রা পোশাক গুটিয়ে হেঁটেই চলাচল করছেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল সামান্য বৃষ্টিতেই এই এলাকা এভাবে তলিয়ে যায়। মানুষ বাধ্য না হলে বের হন না। সামান্য দূরত্ব যেতেও রিকশাভাড়া দিতে হয় যা বৃষ্টির সময়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ বা তিনগুণ।

দুর্ভোগ পেরিয়ে অফিস-আদালত-স্কুল-কলেজে যেতে হয়েছে মতিঝিলের কাছাকাছি গোপীবাগ এলাকার বাসিন্দাদেরও। নিতু নামের একজন জানালেন তারা পানি পার হয়ে কোনোক্রমে অফিসে আসলেও পানির জন্য কাজের লোক আসে না দুইদিন ধরে। তাই দুর্ভোগ বেড়েছে অনেক।

এছাড়াও বৃষ্টিপাতের একদিন পার হয়ে গেলেও পানি জমে আছে পূর্ব তেজতুরীবাজার মহিলা কলেজের সামনে ও আশপাশের এলাকায়। এছাড়াও খিলগাঁওয়ের গোরান, সিপাহীবাগ, চৌধুরীপাড়ার কিছু অংশ, খিলগাঁও তালতলা, বাড্ডার কিছু এলাকা, মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আশেপাশে, ডেমরার কোনাপাড়ার শামসুল হল কলেজ এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, সোমবার (২৭ মে) ঢাকায় ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা এবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মঙ্গলবার (২৮ মে) বৃষ্টি না থাকলেও আগামীকাল বুধবার (২৯ মে) সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

একদিনের অতিবৃষ্টিতে দুইদিন ধরে ভুগছেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। দুই সিটি করপোরেশন জানিয়েছে তারা জলাবদ্ধতা নিরসনে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। দুইদিন ধরেই কয়েক হাজার মানুষ কাজ করছেন ম্যানহোল পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ও সড়কে পড়া গাছ সরাতে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, করপোরেশন গঠিত ৯১টি দলের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই হাজার ৫০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিরবিচ্ছিন্নভাবে জলাবদ্ধতা ও জলজট নিরসনে কাজ করছেন। স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে মোট (মঙ্গলবার বিকেল ৫.৩০টা পর্যন্ত) ১২০টি ফোন কল এসেছে। এর মধ্যে অতিবৃষ্টিজনিত জলজট সংক্রান্ত ফোন কলের সংখ্যা ৭৮টি। সেসব কলের প্রেক্ষিতে সেসব স্থানে করপোরেশনের লোকবল কাজ করছেন। এছাড়াও ৪২টি ফোন কল ছিল ঝড়ে গাছ পড়ে যাওয়া সংক্রান্ত।

জলজট সরানো ছাড়াও করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ৯৪টি বড় গাছ পড়ে গিয়েছিল যার মধ্যে অধিকাংশ গাছ কেটে সরানো হয়েছে। বাকী কিছু গাছ সরানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মোট ছয়টি ‘সড়কবাতি পোল’ পড়ে গিয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব পোল প্রতিস্থাপন ও মেরামত প্রক্রিয়াধীন।

উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, সোমবার ডিএনসিসি’র ১০টি কুইক রেসপন্স টিম এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রাতভর কাজ করে ডিএনসিসি এলাকার সব প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকার গলি বা নিচু এলাকার শাখা রাস্তাগুলো থেকে পানি অপসারণ করার কাজ চলমান রয়েছে। কুইক রেসপন্স টিম এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ঘুরে ঘুরে শাখা রাস্তাগুলোতে কোথাও জমে থাকা পানি পেলে অপসারণ করছে। নতুন ওয়ার্ডগুলোতে যেসব সড়কে নির্মাণ কাজ চলমান সেসব সড়কে পানি সরাতে কিছুটা সময় লাগছে।

এছাড়া সোমবার রাতে ডিএনসিসি এলাকায় সড়কে উপড়ে পরা মোট ৮৪টি সহ মোট প্রায় ২০০টি গাছ সরানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় ডিএনসিসি’র পাঁচ হাজার ৩০০ পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ১০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করছে। প্রতিটি কুইক রেসপন্স টিমে ১০ জন করে মোট ১০০জন সদস্য রয়েছেন। এছাড়াও ডিএনসিসির হটলাইন ১৬১০৬ নম্বরের মাধ্যমে যেসব এলাকা থেকে জলাবদ্ধতা কিংবা গাছ ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই দ্রুত লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

হটলাইনে সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ২৮১জন নাগরিক ফোন করে গাছ ভেঙে পড়া ও পানি জমে থাকার তথ্য জানিয়েছেন যেখান থেকে ভাঙা গাছ ও পানি অপসারণ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএফ/এনইউ

জলাবদ্ধতা টপ নিউজ বৃষ্টি রাজধানী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর