Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুদকের মামলায় জামিন পেলেন রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্ট্রার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৮ মে ২০২৪ ২০:৪৫

রাজশাহী: নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন পেয়েছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সাবেক উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখ এবং সাবেক রেজিস্টার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন।

মঙ্গলবার (২৮ মে) রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে তারা জামিন নেন।

দুই আসামির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী একরামুল হক, ইব্রাহিম হোসেন ও হাবিবুর রহমান আদালতে তাদের জামিনের আবেদন করেন। রাজশাহী দুদকের আইনজীবী শহীদুল হক খোকন জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক আল-আসাদ মো. আসিফুজ্জামান মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।

এর আগে সকাল ১১টায় আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। তখন সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ ও সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন আসামির কাঠগড়ায় গিয়ে দাঁড়ান। শুনানি শেষ হয় সাড়ে ১১টায়। পুরোটা সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই আসামি। কাঠগড়ায় ওঠার আগে সাবেক ভিসি রফিকুল ইসলাম সেখ মুখে মাস্ক পরে নেন।

শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী একরামুল হক আদালতকে জানান, রুয়েটের নিয়ম-কানুন মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের ব্যাখায় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যতগুলো পদে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল, তার চেয়ে কম সংখ্যক পদেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞাপনে উল্লেখ ছিল, প্রয়োজনে পদের সংখ্যা বাড়তে কিংবা কমতে পারে। তাই এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

এই আইনজীবী আরও বলেন, নিয়োগ কমিটি শুধু সুপারিশ করেছিল। নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছিল সিন্ডিকেট সভা। আরও বেশকিছু ব্যাখা উপস্থাপন করে দুই আসামির জামিনের আবেদন করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী শহীদুল হক খোকন আদালতকে বলেন, রফিকুল ইসলাম সেখ ভিসি থাকাকালে নিজের আত্মীয়-স্বজনকে চাকরি দিয়েছেন স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে। এ জন্য বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে আসামিরা অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতি করে আসামিরা ঘৃণিত অপরাধ করেছেন। তাই তিনি জামিনের বিরোধিতা করেন।

পরে শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর কাঠগড়া থেকে নেমে দুই আসামি আদালত ভবনের নিচতলায় রাজশাহী মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুসাব্বিরুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে কিছুক্ষণ বসেন। এরপর তারা রুয়েটে চলে যান।

দুদকের আইনজীবী শহীদুল হক খোকন বলেন, ‘দুদক মামলা করার পর দুই আসামি উচ্চ আদালতে গিয়ে ৫৬ দিনের জামিন নেন। সেই জামিন শেষে তারা নির্ধারিত তারিখে নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করেন। তারা যেহেতু উচ্চ আদালতের জামিনে ছিলেন, তাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।’

রফিকুল ইসলাম সেখ রুয়েট ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক। একই বিভাগের অধ্যাপক সেলিম হোসেন। দুজনের বাড়িই সিরাজগঞ্জ জেলায়। তারা ভিসি ও রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকাকালে ২০২১ সালে তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত করে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে দুদক ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধান শেষে গত ২৭ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একে অন্যকে লাভবান করার জন্য অপরাধমূলক, অসদাচরণ ও বিশ্বাসভঙ্গ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। লিখিত পরীক্ষা কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন। তারা ছয়জন সেকশন অফিসারের পদের বিপরীতে নিয়োগ দিয়েছেন ১৩ জনকে। জুনিয়র সেকশান অফিসার পদের অনুমোদন ও শূন্য পদ না থাকা সত্ত্বেও এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। পিএটু ভিসি ও পরিচালক পদে দুজনকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিনজনকে নিয়োগ দেন।

বিজ্ঞাপন

দুদকের মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বিজ্ঞপ্তিতে এক পদে বিপরীতে দুজন, মালির তিনটি পদের বিপরীতে সাতজন, গাড়িচালকের একটি পদের বিপরীতে তিনজন এবং কুকের একটি পদের বিপরীতে পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগের মাধ্যমে দুই আসামি ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত অতিরিক্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা ও সহায়ক সুবিধাদি বাবদ এক কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ১০৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছেন। মামলাটি এখন দুদক তদন্ত করছে।

সারাবাংলা/টিআর

অবৈধ নিয়োগ জামিন দুদকের মামলা রাজশাহী রুয়েট উপাচার্য রুয়েট ভিসি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর