Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তদন্তাধীন মামলার তথ্য গণমাধ্যমে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে নোটিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৯ মে ২০২৪ ১২:৫৫

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার

ঢাকা: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডসহ সব তদন্তাধীন মামলার ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকা সংক্রান্ত হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সরকারের প্রতি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (২৯ মে) জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কমিশনার বরাবরে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

বিজ্ঞাপন

নোটিশে বলা হয়েছে, ঝিনাইদাহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে নিখোঁজ হন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

যে ঘটনা ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত। তার মরদেহ ‘সম্পূর্ণ’ উদ্ধার করা সম্ভব না হওয়ার বিষয়টি জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ইলেকট্রনিক, প্রেস এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রিয়েল টাইম আপডেট’ প্রচার করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত পরিচালনা করছে।

সময়ে সময়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনার হালনাগাদ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করছে। সাংবাদিকরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নানান ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। এমন প্রেক্ষিত বিবেচনায় গণমাধ্যমের সামনে কর্তৃপক্ষ উত্তর দিচ্ছেন। ছোটো-খাটো অনেক বিষয় উঠে আসছে। লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম পছন্দ অনুযায়ী হেডলাইন করছে। ফ্রিল্যান্সাররা খণ্ডাংশ উল্লেখ করে ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটকসহ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচার করছেন। এ বিষয়ে হরেক-রকম বিভ্রান্তিও তৈরি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

অতীতেও তদন্তনাধীন চাঞ্চল্যকর ঘটনার ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। তন্মধ্যে বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ড, ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ড, ফেনীর উপজেলা চেয়ারম্যান ইকরাম হত্যাকাণ্ড উল্লেখযোগ্য।

এই সংক্রান্তে আমাদের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি বনাম রাষ্ট্র (৩৯ বিএলডি ৪৭০) মামলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওই রায়ের বলা হয়, ‘এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা খুবই সংগত হবে যে, ইদানীং প্রায়শই লক্ষ্য করা যায় যে, বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশ-র‌্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার পূর্বেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেকসময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অনুমোদনযোগ্য এবং বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতি উৎসাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে একজন অভিযুক্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না যে, তিনি প্রকৃত অপরাধী বা তার দ্বারাই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে। গণমাধ্যমের সামনে গ্রেফতার কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সংগত নয় যে, তার মর্যাদা ও সম্মানহানি হয় এবং তদন্ত চলাকালে অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের পূর্বে গণমাধ্যমে গ্রেফতার কোনো ব্যক্তি বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে এমন কোনো বক্তব্য উপস্থাপন সমীচীন নয়, যা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে বিতর্ক বা প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে।’

রায়ে আরও বলা হয়, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিদের আদালতে উপস্থাপনের পূর্বেই গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন এবং কোনো মামলার তদন্ত চলাকালীন সময়ে তদন্ত বিষয়ে কতটুকু তথ্য গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করা সমীচীন হবে সে সর্ম্পকে একটি নীতিমালা অতি দ্রুততার সঙ্গে প্রণয়ন করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ/সুরক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহাপরিদর্শক, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া গেল।’

সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের ঘোষিত রায় সবার জন্য বাধ্যকর। ফলশ্রুতিতে হাইকোর্ট বিভাগের উল্লেখিত রায় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়।

এমন পরিস্থিতিতে আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডসহ সব তদন্তাধীন মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়।

অন্যথায় উচ্চ আদালতে যথাযথ আইনি প্রতিকার আবেদন করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

আনোয়ারুল আজীম আনার নোটিশ মামলার তথ্য

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর