‘টাকা দিয়েও মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিতে পারছে না’
২৯ মে ২০২৪ ২৩:০১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: টাকা দিয়েও আওয়ামী লীগ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বুধবার (২৯ মে) বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়িতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এ সভার আয়োজন করে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ৭ শতাংশ মানুষও ভোট দিতে যায়নি। চুরি করে ৪২ শতাংশ ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। আজ উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। টাকা দিয়েও সেখানে মানুষ নিয়ে যেতে পারছে না। ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য। বিএনপির ইশারায় যদি মানুষ ভোট দিতে না যায়, তাহলে শেখ হাসিনা ভেবে দেখুন আমাদের আরেক ইশারায় আপনার কী হবে? ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কখনও ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না।’
দেশে ১৯৭৪ সালের মতো আরেকটি দুর্ভিক্ষ হতে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘করুণ অবস্থায় আজ দেশের অর্থনীতি। কোনো যুবক আজ দেশে থাকতে চায় না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের চেয়েও বড় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। হয়তো অনেকে বুঝতে পারছে না। কারণ ভুখার মিছিল বের হচ্ছে না। রিজার্ভ আছে এখন মাত্র সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার। অথচ আমাদের প্রয়োজন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। ব্যাংকিং খাতের কী অবস্থা সেটা তো দেশের মানুষ দেখছেই। দুই দিন পর ব্যাংকের লকারেও কোনো টাকা থাকবে না। যদি দেশের এ অবস্থা চলে তাহলে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষকেও হার মানাবে।’
‘আজ অর্থনীতির এ অবস্থা কেন? ক্যানসার, যক্ষ্মা হলে রোগ বুঝতে অনেক দেরি হয়। আওয়ামী লীগ লোকেরা ছিঁচকে চোরের মতো একটু একটু চুরি করতে করতে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। লুণ্ঠিত সে টাকা ফেরত আনতেও কোনো পদক্ষেপ নেই। ৭০০ টাকার জিনিস কেনা হয়েছে ২ হাজার টাকায়। বর্তমানে এই হচ্ছে অবস্থা।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আওয়াজ শুনলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘুম হারাম হয়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বন্দি করে শেখ হাসিনা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পারেননি। দেশনায়ক তারেক রহমান সেখানে উপস্থিত হয়ে গেছেন। তারেক রহমানের আওয়াজ শুনলেই শেখ হাসিনার ঘুম হারাম হয়ে যায়। তারেক রহমান যখন দেশে ফিরবেন তখন শেখ হাসিনা লন্ডনে থাকবে কিনা অন্য দেশে থাকবেন আমার জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘যারা বলেছিলেন জিয়াউর রহমান নেই মানে বিএনপি শূন্য, তাদের মুখে চুনকালি দিয়ে গৃহবধু থেকে রাজনীতিতে নেমে এসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তৎকালীন ১০ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছিলেন, স্বৈরাচারের বুটের তলা থেকে যতক্ষণ গণতন্ত্র রক্ষা না হবে ততক্ষণ আমি ঘরে ফিরব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া এখনো পালাননি, বেঁচে আছেন। গণভবনে বসে বসে খালেদা জিয়ার অসুস্থ শরীরের কাতরানি, কান্না শোনার জন্য আপনি টিপ্পনি কাটেন। খালেদা জিয়ার নাম যখন কানে যায় তখন প্রেশার তো ১৬০ থেকে ১৭০ উঠে যায় আপনার। তখন তো চোখের ঘুম হারাম হয়ে যায়। রাতে ঘুমের ট্যাবলেট না খেলে ঘুম আসে না।’
মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার বিবরণ দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বাংলাদেশের মানুষের ওপর বর্বর হামলা করে তখন জিয়াউর রহমান তাদের বর্বরতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মেজর। কোনো অধিনায়ক ছিলেন না। তার অধিনায়ক ছিলেন আবদুর রশিদ জানজুয়া। সে অধিনায়কসহ পাকিস্তানের কিছু জওয়ানকে জিম্মি করে বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙ্গালি কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি ষোলশহরে সেদিনই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি শুধু যুদ্ধের আহ্বান করেননি, পাকিস্তানি বাহিনীদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য যুদ্ধে স্বাধীন হওয়ার ডাকও দিয়েছিলেন।’
আওয়ামী লীগের সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের স্বাধীনতা শুধু কথার মধ্যে দিয়ে আসেনি। এসেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। পাকিস্তানের কর্নেল জানজুয়া জিয়াউর রহমানের হাতে নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনাকে বলব, আপনার আশেপাশে আছে এমন কাউকে বের করেন তো যে যুদ্ধে গুলি ছুঁড়েছে। আপনার দলে মুক্তিযোদ্ধা নেই, এ অপবাদ আমি দেব না। আছে, কিন্তু সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা নয়।’
জিয়াউর রহমানের ছবি পাহারা দিতে পুলিশ লাগে না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশের মঙ্গল যারা চায়নি তারাই জিয়াউর রহমানকে সেদিন চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে নির্মমভাবে খুন করেছে। জিয়ার জীবনের শুরুই এ চট্টগ্রামে, শেষও এ চট্টগ্রামে। তিনি বলতেন স্লোগানে মুক্তি আসবে না। আমাদের উৎপাদনমুখী, কর্মমুখী হতে হবে। প্রত্যেকটি মানুষের হাতে কাজ পৌঁছে দিতে হবে।’
নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ মজুমদার, হারুন উর রশিদ ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম