Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যায় ডুবছে সিলেট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ মে ২০২৪ ১৩:২০

টানা বৃষ্টিপাত আর উজানের ঢলে সিলেটের অন্তত চার উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের সব নদনদীর পানি বেড়েই চলেছে। জেলার প্রধান প্রধান প্রায় সব নদীর পানিই বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ অন্তত ১৫টি জায়গায় ভেঙে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। জেলার অন্তত চারটি উপজেলা এখন বন্যায় আক্রান্ত। আগামী দুই-তিন দিনে অব্যাহত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় জেলাজুড়ে প্রবল বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসন বলছে, মূলত বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলের কারণে এই বন্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলে নদীর পানি কমে যাবে, সেক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেট জেলা প্রশাসন প্রস্তুত।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে পানি উঠেছে, এটি মূলত অতি বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে। এক ঘণ্টা বৃষ্টি না হলেই পানি নেমে যাচ্ছে। আবার বৃষ্টি হলে পানি বাড়ছে। এখন যতটুকু তথ্য আমরা পেয়েছি, আগামী দুই-তিন দিন সিলেট এলাকা তো বটেই, উজানে ভারতের সংলগ্ন এলাকাগুলোতেও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। বন্যা পুরোটাই নির্ভর করছে বৃষ্টিপাতের ওপর, যার ওপর আমাদের হাত নেই। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, আমরা প্রস্তুত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ চলে যাচ্ছে। যেকোনো সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসন প্রস্তুত।’

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুর ১২টার দিকে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সারাবাংলাকে বলেন, সিলেটের প্রায় সব পয়েন্টেই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এ ছাড়া আমাদের বেড়িবাঁধে ১৫ থেকে ১৬টি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীতে পানি ১৪ দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছিল, যেখানে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। একই নদীতে সিলেট পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১০ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার।

বিজ্ঞাপন

আরও দুই-তিন দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় সিলেটের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

একই সময়ে অমলশিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীতে পানি বিপৎসীমা (১৫ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করে ১৭ দশমিক ৪২ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৩ দশমিক শূন্য ৫ সেন্টিমিটার, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এই পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৩ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। এ ছাড়া ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৮ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার) এবং শেরপুর পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার)।

এদিকে সারিঘাট পয়েন্টে সারি নদীর বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবার সকালে এখানে পানির উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার। জাফলং পয়েন্টে একই সময়ে ডাউকি নদীতে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়, যেখানে বিপৎসীমা ১৩ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া গোয়াইনঘাট পয়েন্টে সারিগোয়াইন নদীতে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার, যেখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার।

স্থানীয়দের তথ্য বলছে, উজানের ঢলে নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। বিশেষ করে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। অনেক বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে সড়ক। অনেককে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়ন, লেঙ্গুড়া, ডৌবাড়ি, নন্দীরগাঁও, পূর্ব ও পশ্চিম আলীরগাও, পশ্চিম জাফলং ও মধ্য জাফলংয়ে পানি বেড়েছে বেশি। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক তলিয়ে যাওয়ার কারণে যানবাহনের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলায় নিজপাট লামাপড়া, বন্দরহাটি, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, বড়খেলা, মেঘলী, তিলকৈপাড়া, ফুলবাড়ী, নয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, ডিবির হাওর, ঘিলাতৈল, মুক্তাপুর, বিরাইমারা হাওর, খারুবিল, লমানীগ্রাম, কাটাখাল, বাউরভাগ ও বাওন হাওরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের বিভন্ন এলাকা।

কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটির পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ নিয়মিত তার ফেসবুক পেজ থেকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। সিলেটে বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশ ত্যাগ করার পর বর্ষাকালের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করেছে। এ ছাড়া মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের আরেকটি শক্তিশালী প্রভাবক মেসন জুলিয়ান দোলের প্রভাব রয়েছে। এসব কারণে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঘুর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি অতিক্রম করেছে। এতে মেঘালয় রাজ্যের খাসি এলাকায় ২৬ মের পর এক হাজার থেকে দেড় হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর ৩০ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত প্রতিদিনই আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে ১১৬ মিলিমিটার থেকে ২০৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। মোস্তফা কামাল পলাশ বলছেন, এতে উজানের ঢল আরও বাড়বে। এতে করে ২০২২ সালের মতো ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হতে পারে সিলেট।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করেছি। গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৫৬টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৪৮টি, কানাইঘাটে ৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। এ ছাড়া আমাদের যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলোও ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুতি রেখেছি।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, গতকাল (বুধবার) রাত থেকে যারা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছে, তাদের জন্য আমরা খাবারের ব্যবস্থা করেছি। শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে। খিচুড়িজাতীয় খাবারও রান্না করে দিচ্ছি। বন্যায় নিমজ্জিত এলাকায় বিভিন্ন দফতরকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। গত রাতে জৈন্তাপুরে যেমন হঠাৎ পানিপ্রবাহ বেড়ে যায়। সেখানে ভোর পর্যন্ত উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/টিআর

উজানের ঢল ঘূর্ণিঝড় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত বন্যা বৃষ্টিপাত মেঘালয় রেমাল রেমালের প্রভাব সিলেট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর