ফারইস্ট স্টকসের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ
৩০ মে ২০২৪ ২৩:৫৭
ঢাকা: অর্থপাচারের মামলায় অভিযুক্ত এম এ খালেকের একসময়ের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (৩০ মে ) বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, বিষয়টি তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোল্লাহ মো. মিরাজ-উস-সুন্নাহ, উপ-পরিচালক সুলতান সালাহ উদ্দিন, সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মুজাফফর মাহমুদ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মনোনীত একজন অফিসার।
গঠিত কমিটিকে প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি, অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও কারসাজি ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখে আগামী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, কমিশন মনে করে যে, পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের নয়টি বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা প্রয়োজন। তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্সে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন ওই বিষয়গুলোর ওপর অনুসন্ধানের জন্য ওই চারজনকে নির্দেশ দিচ্ছে।
২০১৮ সালের জুন শেষে ১৮টি ব্রোকারেজ হাউসের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের অর্থ আইনবহির্ভূতভাবে ব্যবহারের তথ্য পায় ডিএসই। এতে ফারইস্টের ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা ঘাটতি ছিল। ঘাটতি পূরণের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফের অতিরিক্ত সময় চেয়ে আবেদন করে ফারইস্ট স্টকস। তখন ৫ মাসের সময় পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন এম এ খালেক। তিনি ছিলেন উদ্যোক্তা। খালেক গড়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বিমা, সিকিউরিটিজ কোম্পানিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন তিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের এক মামলায় এম এ খালেকের ঢাকার বারিধারার ১৫০ কোটি টাকার বাড়িতে আদালতের জব্দ আদেশ ঝুলিয়ে দেয় সিআইডি। সে সময় তার বিরুদ্ধে ৫১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সিআইডি অনুসন্ধান করছিল বলে জানা যায়। এর পর ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ১১৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে খালেকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডি।
ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এমএ খালেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থেকে নিজে এবং আত্মীয়স্বজনসহ সহযোগীরা মিলে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই টাকা সম্পদে রূপান্তর ও বিদেশে পাচার করেছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানের সাবেক সিইও তরফদার জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সিএফও জাহিদুল হক, এমএ খালেকের স্ত্রী সাবিহা খালেক, ছেলে শাহরিয়ার খালেদ রুশো, মেয়ে শারওয়াত খালেদ, জামাতা তানভিরুল হক ও শ্বশুর ফজলুল হক এবং আবুল কাশেম মোল্লা, রাশেদ মোহাম্মদ মাজহারুল, খশরুবা সুলতানা শিল্পী, শেখ ইউসুফ আলী, মাহবুবা সুলতানা, দিলরুবা সুলতানা, নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মোস্তফা ও কাজী শাহরিয়ার। সিআইডি মামলাটির তদন্ত করবে। আসামিদের মধ্যে সেই সময় এমএ খালেক ও নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা গেছে, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী ৮৯ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯৭ টাকার চেক বা নগদ টাকা জমা দেন। বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে ওই টাকা দেখানো হলেও কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে তা জমা হয়নি। অর্থাৎ ভুয়া জমা দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ ছাড়া, আসামিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক জমা করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে (অপর্যাপ্ত জের, স্বাক্ষরে গরমিল, টাকার অংক ভুল লেখা ইত্যাদি) চেকগুলো ডিজঅনার হয়, যা রিভারসাল এন্ট্রি (জমা) দেখানো হয়েছে।
এদিকে, অভিযুক্তরা পরস্পর যোগসাজশে কোম্পানির হিসাবের যোগফলে ২২ কোটি ৮৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকার স্থলে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকা বসিয়ে তথ্যের গরমিল করে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম