চীন-উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে ফাটল?
৩১ মে ২০২৪ ১১:০৩
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে এক যৌথ বিবৃতিতে সই করেছিলে বেইজিং। সেই যৌথ বিবৃতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছে পিয়ংইয়ং। সুসম্পর্ক বজায় থাকা চীন ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে গত কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো বিষয় নিয়ে উত্তেজনা ছড়াল। এর সূত্র ধরে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরতে পারে কি না, সে আশঙ্কার কথাও আলোচনায় তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়া প্রায়ই সামরিক গুপ্তচর উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে থাকে। তাদের এ সংক্রান্ত সর্বশেষ যে প্রচেষ্টা, তা চীনের বড় একটি কূটনৈতিক উদ্যোগকে ব্যাহত করেছে। আর তা থেকেই দুই মিত্র দেশের মধ্যে এই আপাত সংঘাতের সূত্রপাত।
উত্তর কোরিয়া যখন ওই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয়, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ওই সময় সিউলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ত্রিপাক্ষিক সংলাপের একটি অংশ ছিল ওই উদ্যোগ, যে ধরনের আলোচনা গত পাঁচ বছরে একবারও সম্ভব হয়নি। গত সোমবার (২৭ মে) বিকেলে ত্রিপাক্ষিক ওই আলোচনা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আগ্নেয় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উত্তর কোরিয়ার উপগ্রহ আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়।
বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের সঙ্গেই কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা উত্তর কোরিয়ার প্রধান মিত্র শক্তি হিসেবে পরিচিত চীন। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতেও বড় অবদান রয়েছে চীনের। ফলে চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বড় রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে সধারণতই মতানৈক্যের প্রকাশ দেখা যায় না। গত সোমবার সেটিই ঘটেছে।
হাওয়াইয়ের ইস্ট-ওয়েস্ট সেন্টারের কোরিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জাঁ লি বলছেন, এ ঘটনা বুঝিয়ে দিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে ‘ঠোঁট ও দাঁতের মতো কাছাকাছি’ বলে যে সম্পর্কের কথা দুপক্ষই জোর দিয়ে বলে আসছে, তাতে ফাটল ধরেছে। উভয় পক্ষই সেই ফাটলের কথা চেপে রেখেছিল, যা এবার প্রকাশ পেয়েছে।
জাঁ লি আরও বলেন, আমার মনে হয়, আমরা যা দেখলাম তা হলো— সামান্য একটু চাপ পড়লেই এই ফাটল আরও বেড়ে বড় আকার ধারণ করতে পারে। তারা যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি দেখায়, সেটি আর নাও থাকতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার এই কর্মকাণ্ড চীনের লি কুয়াংকে অস্বস্তি ও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। উত্তর কোরিয়ার উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সময় লি জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার দুজনেই এর নিন্দা জানান।
চীনের সঙ্গে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওই ত্রিপাক্ষিক আলোচনার সমালোচনাও করেছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে এই তিন দেশ ‘উপহাস ও তামাশা’ করছে বলে অভিযোগ করা হয়। বলা হয়, তাদের কর্মকাণ্ড উত্তর কোরিয়ার সার্বভৌমত্বের প্রতি ‘স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ’ এবং আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘অহেতুক হস্তক্ষেপ’। তিন দেশের তীব্র নিন্দা জানায় পিয়ংইয়ং।
২০১৭ সালের পর থেকে উত্তর কোরিয়া আর কখনো চীনের এক কট্টর সমালোচনা করেনি। ওই বছরই বেইজিং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছিল। তারপর থেকে উত্তর কোরিয়া ও চীনের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। নতুন একাধিক নিষেধাজ্ঞা বিরোধিতা করছে এখন চীন। এমনকি জাতিসংঘের প্রস্তাবে নিষিদ্ধ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে নাটকীয়ভাবে সম্প্রসারিত করেছে উত্তর কোরিয়া। অথচ এই প্রস্তাবকে এক সময় সমর্থন করেছিল চীন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক ওপরে ওপরে দেখতে ভালো হলেও ভেতরে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। যেমন— চীনের প্রধান নেতা শি জিনপিং গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তর কোরিয়ার প্রধান নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তবে গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার পূর্বপ্রান্তে সফর করেছিলেন কিম। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা সম্প্রসারিত করতে সম্মত হন।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, রাশিয়া যদি তাদের সীমান্তে উল্লেখযোগ্য পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণ করে, তাহলে চীনের তাতে অস্বস্তি হতে পারে। এর মধ্যেও উত্তর কোরিয়া ও চীনের মধ্যেকার সাম্প্রতিক উত্তেজনার কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।
উত্তর কোরিয়া কিম জং উন কূটনৈতিক সম্পর্ক চীন চীন-উত্তর কোরিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শি জিনপিং