‘টি-২০ বিশ্বকাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে আপন করে নেবে’
৩১ মে ২০২৪ ১৯:৩৪
দরজায় কড়া নাড়ছে টি-২০ বিশ্বকাপ। আর মাত্র একদিন পরেই যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে বসছে টি-২০ বিশ্বকাপের এবারের আসর। ক্রিকেট বিশ্বে তেমন পরিচিত মুখ না হলেও সহ-আয়োজক দেশ হিসেবে এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের থাকছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক পকিস্তান অধিনায়ক ও কিংবদন্তি ক্রিকেটার জহির আব্বাস মনে করেন, এই বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটকে আপন করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ভয়েস অফ আমেরিকাতে নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন তিনি। চলুন দেখে নেওয়া যাক তার ভাষাতেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে আব্বাসের ভাবনা।
ইতিহাস যখন কথা বলে
যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলে ১৮৪৪ সালে কানাডার বিপক্ষে। প্রায় ২০০ বছর পর সেই যুক্তরাষ্ট্রই আইসিসি টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে শতাব্দী পুরনো ইতিহাস ও ক্রিকেটের প্রতি সমর্থন, বিশেষ করে ফিলাডেলফিয়া ও পেনসিলভেনিয়ায়। সেখানে কলেজ ও স্থানীয় ক্লাব নিজেদের মাঝে ক্রিকেট খেলে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ বেজবল, আমেরিকান ফুটবল ও বাস্কেটবলকে বেছে নিয়েছে।
কিন্তু ক্রিকেট এখনো জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে ক্রিকেট নিয়ে এখানে বেশ আগ্রহ ছিল। একজন স্কুল ছাত্র হিসেবে আমার মনে আছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ১৯৫৯ সালে যখন করাচি সফর করেছিলেম, তখন তিনি পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের হয়ে খেলার সময় আমি জানতে পেরেছি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট খেলা দেখার সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খানকে বলেছিলেন, পাকিস্তানের উচিত ইংল্যান্ডের মত ঘাসের উইকেটে খেলা। তার এই কথাতেই বদলে যায় পাকিস্তানের ক্রিকেট, কারণ এর আগে পাকিস্তানে ম্যাটের উইকেটে খেলা হতো।
আমি যখন ১৯৮০র দশকে অস্ট্রেলিয়া সফর করি, তখন কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি বেজবল প্লেয়ার বেব রুথের পুরনো ছবি দেখেছিলাম, দুই আইকন সেখানে একসাথে। ব্র্যাডম্যান ১৯৩২ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় কয়েকটি প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছত্রছায়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট
ক্রিকেটের সাথে কিছু মিল থাকায় বেজবল ও আমেরিকার ফুটবলের তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে দেশটি হয়তো ক্রিকেট থেকে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে। আমেরিকার ফুটবল গৃহযুদ্ধের সময় জনপ্রিয়তা পায় ও পরবর্তীতে বড় একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। অন্যদিকে সেই যুগে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ছত্রছায়ায় অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিকেট ছড়িয়ে পড়ে। সাবেক উপনিবেশগুলোতেও এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এই মুহূর্তে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও সাম্প্রতিককালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে ক্রিকেট প্রচণ্ডভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই দেশগুলোতে ক্রিকেটের প্রতি সমর্থনও প্রচুর। এই পাঁচটি দেশই এবারের বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে।
আইসিসির সদস্য সংখ্যা এখন একশরও বেশি। বিগত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের উত্থান দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, এই দেশে ক্রমেই দক্ষিণ এশিয়ান সম্প্রদায় ও ব্রিটেন-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত ক্রিকেটপ্রেমী দেশ থেকে আসা প্রবাসীরা সংখ্যায় বেড়ে চলেছেন। ক্রিকেট অবকাঠামোর প্রতি নজর দিলে ও স্কুল-কলেজ পর্যায়ে এই খেলাকে উৎসাহ দিলে এখানেও ক্রিকেটের প্রসার হবে। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের নিয়ে গত বছর বড় একটি বাণিজ্যিক লিগ হয়েছিল। এই ধরনের আয়োজন স্থানীয় ক্রিকেটারদের বিকাশে সহায়তা করবে। এছাড়া বর্তমানে ক্রিকেট রুপান্তরিত হয়ে একটি দ্রুতগতির ও স্বল্প সময়ের খেলায় পরিণত হয়েছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রে দর্শকের সাথে খাপ খাইয়ে যাবে।
রঙিন জার্সিতে বাড়বে আগ্রহ
বর্তমানে টি-২০ ফরম্যাট বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণ। বেজবলের মতো এই ফরম্যাটের খেলাও তিন থেকে চার ঘণ্টার মাঝে শেষ হয়। সাদা জার্সির বদলে এখন রঙিন পোশাকে খেলা হয়, তাও ফ্লাড লাইটের নিচে। বড় লিগে চিয়ারলিডার আনা হয়েছে। ক্রিকেটারদের এসব লিগে বড় অংকের টাকায় কেনা হচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতের ম্যাচসহ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর দর্শক আকর্ষণ করতে পারবে। এই দুই দেশের মাঝে খেলার বিশেষ একটা ইতিহাস আছে, বিশেষ করে বিশ্বকাপে। এই ম্যাচ টেলিভিশন ও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচুর দর্শক আকৃষ্ট করবে। আমার মনে হয় এই দুই দেশের মাঝে আবারও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হওয়া উচিত। রাজনীতি ও খেলাকে আলাদা রাখাই ভালো।
ভারতের বিরুদ্ধে খেলার সময় প্রচুর দর্শকের কথা আমার মনে আছে। সেই স্মৃতি মনে করে আমি স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও হয়তো একই অনুভূতি হয়। ভারতে আমার এখনো কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে। যেমন সুনীল গাভাস্কার, কপিল দেব, যার অধীনে ভারত ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেট ও নতুন ভবিষ্যৎ
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রসারের একটি আদর্শ জায়গা। এখানে খেলাধুলা একটি বড় শিল্প। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে পাঁচটি নতুন খেলার মাঝে ক্রিকেটও থাকছে। শেষবার ১৯০০ সালে প্যারিস অলিম্পিকে ক্রিকেট ছিল। আমি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৪ ফুটবল বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজন করেছিল। এরপর সকার এখানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাদের নারী দল একাধিকবার বিশ্বকাপ জিতেছে।
আমি আশা করছি ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে আপন করে বেনে। এই খেলার সাথে তাদের বন্ধনও পাকাপোক্ত হবে।
সারাবাংলা/এফএম