যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইসরাইলের, ইতিবাচক হামাস
১ জুন ২০২৪ ১০:০৮
আট মাস ধরে চলমান যুদ্ধে ইতি টানতে এবার ইসরাইল একটি প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন এই প্রস্তাবটিতে তিন ধাপে যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং যুদ্ধের পরবর্তী দিনগুলোর জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। শুক্রবার (৩১ মে) বিকেলে হোয়াইট হাউজ থেকে একটি বিশেষ ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই পরিকল্পনার বিস্তারিত জানিয়েছেন।
জো বাইডেন জানিয়েছেন, ইসরাইলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হবে। এই সময়ে গাজার সব জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার করা হবে। যুদ্ধবিরতির সময় হামাস নির্দিষ্ট সংখ্যক ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। অগ্রাধিকার পাবেন- বয়স্ক ও নারী জিম্মিরা। প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতিতে হামাসের হাতে জিম্মি কিছু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিককেও মুক্তি দিতে হবে। জিম্মি অবস্থায় নিহতদের মরদেহও ইসরাইলকে ফেরত দিতে হবে।
বিনিময়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে। এই সময়ে গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা বাড়বে। গাজা উপত্যকায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা প্রবেশ করবে।
এই ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির সময় পরবর্তী ধাপের শান্তি আলোচনা চলবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে ইসরাইল এবং হামাস দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবে। আলোচনা সফল হলে দ্বিতীয় ধাপে হবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি। জো বাইডেন ইসরাইলের প্রস্তাব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অনেক বিশদ বিবরণ রয়েছে যা প্রথম ধাপ থেকে দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার জন্য আলোচনা করা দরকার, কারণ ইসরাইল তার স্বার্থ সুরক্ষিত করা নিশ্চিত করতে চাইবে।
ইসরাইলের এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনা যদি চলমান থাকে তাহলে সময় বেশি লাগলেও যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয় ধাপে হামাসের হাতে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে। বিনিময়ে, দ্বিতীয় ধাপে ইসরাইল গাজা থেকে তাদের সমস্ত বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
ইসরাইলের প্রস্তাব থেকে উদ্বৃত্ত করে জো বাইডেন বলেন, হামাস যদি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, তাহলে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি চিরতরে শত্রুতা বন্ধে উন্নীত হবে।
চূড়ান্ত এবং তৃতীয় ধাপে গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনা এবং জিম্মিদের কোনো চূড়ান্ত মুক্তি বা ফেরতের বিষয় বাকি থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই ধাপে আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজা উপত্যকায় বাড়ি-ঘর, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্নির্মাণ করা হবে।
ইসরাইলের এই যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা প্রস্তাবের ভুঁয়েসি প্রশংসা করেছেন জো বাইডেন। তিনি তার ভাষণে ইসরাইলি নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ইসরাইলের সরকারের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা সম্ভবত এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেন। আমি ইসরাইলের নেতৃত্বকে যতই রাজনৈতিক চাপ আসুক না কেন এই চুক্তিকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি ইসরাইলি জনগণকে সম্বোধন করে বলেন, আমরা এই মুহূর্তটি হারাতে পারি না।
হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া
এদিকে, হামাসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার, পুনর্গঠন এবং বন্দীদের বিনিময়ের আহ্বানের কারণে প্রস্তাবটিকে ইতিবাচকভাবে দেখেছে। তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতিকে কেন্দ্র করে যেকোনো প্রস্তাবকে ইতিবাচক এবং গঠনমূলকভাবে আমলে নিতে প্রস্তুত।
তবে হামাস ইসরাইলের এই প্রস্তাবে কিছু ঘাটতিও খুঁজে পেয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের নেগোশিয়েশন দলের সঙ্গে আছেন এমন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা—যিনি নিজে ইসরাইলের এই নতুন প্রস্তাবটি দেখেছেন— তিনি বলেছেন, নথিতে এমন গ্যারান্টি নেই যে যুদ্ধ শেষ হবে বা গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্যরা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। প্রস্তাবটি কাতারভিত্তিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, আল জাজিরার সংবাদদাতা হাসেম আহেলবারা বলেছেন, জো বাইডেনের ঘোষিত ইসরাইলি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে হামাসের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। হামাস ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা এই প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, হামাস মূলত এখন আমাদের বলছে যে তারা চুক্তিটি নিয়ে এগিয়ে যেতে ইচ্ছুক এবং এটি চূড়ান্ত হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার।
আল জাজিরার এই সংবাদদাতা আরও বলেন, হামাস কয়েক মাস ধরে বলে আসছে যে যুক্তরাষ্ট্রই ইসরাইলকে সব ধরনের সমর্থন দিচ্ছে। গাজার জনগণের সঙ্গে যা ঘটছে তার জন্য আমেরিকানরাই দায়ী। আজ হামাস বলছে, জো বাইডেনের এই বক্তৃতার বিষয়বস্তুকে ইতিবাচকভাবে দেখছে তারা। তারা এগিয়ে যেতে ইচ্ছুক এই কথা মাথায় রেখে যে, তারা দেখতে চায় তাদের দাবি পূরণ হয়েছে। মূলত তারা কয়েক মাস ধরে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি করে আসছে, যা এই প্রস্তাবে দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। তারা গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার দেখতে চায়, তাও দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে। এবং তারা গাজার পুনর্গঠনও দেখতে চায়, সেটাও এই প্রস্তাবের শেষ ধাপে আছে।
সারাবাংলা/আইই