থাপ্পড়ের জবাব খুনে
২ জুন ২০২৪ ১৮:১৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো : দুই রিকশাচালক- একজন বৃদ্ধ, আরেকজন যুবক। গ্যারেজে বসে লুডু খেলতে গিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। বৃদ্ধ রিকশাচালক এ সময় যুবককে থাপ্পড় মারে। এর প্রতিশোধ নিতে খুনের জেদ চাপে যুবকের মধ্যে। সুযোগ বুঝে এক রাতে বৃদ্ধের রিকশায় উঠে তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে লোহার রেঞ্জ দিয়ে পিটিয়ে খুন করে।
খুনের ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (২৯ মে) গভীর রাতে নগরীর বন্দর থানার কাস্টমস মোড় থেকে ইসহাক ডিপোর মাঝামাঝি কাস্টমস ব্রিজের পশ্চিমে। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে শনিবার (১ জুন) রাতে ওই রিকশাচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত আলমগীর ফকিরের (৬৫) বাড়ি বরিশাল জেলায়। তার স্ত্রী-সন্তানেরা নগরীর বন্দর থানার সাঁচী চৌধুরীপাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে আলমগীর ফকির ওই বাসায় থাকতেন না। তিনি রিকশা চালিয়ে ভাসমানভাবে থাকতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেফতার মো. আরিফের (২৮) বাড়ি ভোলা জেলায়। তার বাসা নগরীর বন্দর থানার ধুপপুল এলাকায়।
বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিশোর মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর আমরা যখন পরিচয় নিশ্চিত হই, তখন জানতে পারি যে, আলমগীর ফকির যে রিকশা চালাচ্ছিলেন সেটি এবং তার মোবাইল পাওয়া যাচ্ছে না। তখন আমাদের ধারণা হয় যে, ছিনতাইকারীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরে আমরা ওই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আরিফকে শনাক্ত করে তাকে বাসা থেকে গ্রেফতার করি। তার কাছেই মোবাইলটি পাওয়া যায়।’
‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, আরিফ ঘটনার তারিখে অর্থাৎ গত বুধবার রাতে সল্টগোলা ক্রসিং মোড় থেকে ভিকটিমের রিকশায় উঠছে। সেই রিকশা কাস্টম ব্রিজের দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। লাশও পাওয়া গেছে কাস্টম ব্রিজের আনুমানিক ১০০ গজ পশ্চিমে। আমরা সেখান থেকে আরিফের তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার রেঞ্জ উদ্ধার করি।’
আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসআই কিশোর বলেন, ‘আলমগীর ফকির ও আরিফ একই গ্যারেজের রিকশা চালাতেন। সে কারণে তাদের মধ্যে সখ্য ছিল। কয়েকদিন আগে গ্যারেজে বসে দুজন মোবাইল অ্যাপসে লুডু খেলছিলেন। তখন তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আলমগীর আরিফকে থাপ্পড় মারে। এরপর আরিফ শুধু সুযোগ খুঁজছিলেন কখন প্রতিশোধ নেওয়া যায়। হত্যার পরিকল্পনা করে সে গ্যারেজ থেকে নিয়ে একটি রেঞ্জ নিজের কাছে রাখে।’
‘গত বুধবার রাত আনুমানিক সোয়া ১টার দিকে আরিফ আলমগীরের রিকশায় ওঠে। রিকশা কাস্টমস ব্রিজের পশ্চিমে কিছুটা নির্জনে পৌঁছার পর সে রেঞ্জ দিয়ে আলমগীরের মাথায় আঘাত করে। এর পর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। আরিফ তাকে রেঞ্জ দিয়ে মাথা এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর লাশ টেনেহিঁচড়ে সড়ক থেকে কিছুটা আড়ালে রেখে আলমগীর ফকিরের রিকশা ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। মোবাইল নিজের কাছে রেখে টানা রিকশার যন্ত্রাংশ খুলে খুলশীর সর্দার বাহাদুরনগর এলাকায় একটি গ্যারেজে সেগুলো সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে।’
খুনের ঘটনায় নিহতের ছেলে মিরাজের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার বিকেলে আরিফকে আদালতে হাজির করা হয়। খুনের দায় স্বীকার করে আরিফ আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বলে এসআই কিশোর মজুমদার জানান।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম