নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ
৩ জুন ২০২৪ ০৮:১৯
ঢাকা: আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হতে পারে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অংকে এটি হতে পারে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আর্থিক মাদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এই অংক অনুমোদন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আগামী বাজেট বক্তৃতায় তিনি এটি ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাস্তবতা বিবেচনা করে আগামী অর্থবছরের জন্য উচ্চাভিলাসী লক্ষ্য থেকে সরে আসছে সরকার। কেননা চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরে সেটি কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমে›ন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হচ্ছে সেটি হয়ত বাস্তবতা বিবেচনা করেই। কিন্তু আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে লক্ষ্য আছে তার চেয়ে এটি অনেক কম। ফলে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে যাওয়ার পথ থেকে সরে যেতে হচ্ছে। আবার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে সেটিও যে অর্জন করা সম্ভব হবে সে গ্যারান্টিও নেই। কেননা ডলার সংকটের কারণে আমদানি সীমিত করে রাখা হয়েছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর কৌশলগুলো আরও স্পষ্ট হওয়া দরকার। কার্যকর উদ্যোগ দরকার।’
এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর (২০২৩-২৪) সেবা খাতে বাড়বে প্রবৃদ্ধি। কমবে কৃষি ও শিল্পে। সার্বিকভাবে প্রাথমিক হিসেবে চলতি অর্থবছরে মোট দেশ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের প্রাথমিক হিসবে ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
এর আগে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ১০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা বা ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা বা ২ হাজার ৭৪৯ মার্কিন ডলার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছর বেড়েছে বিনিয়োগ ও সঞ্চয়। বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশজ সঞ্চয় বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা গত অর্থবছর ছিল ২৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া জাতীয় সঞ্চয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বিবিএস’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের গত ৭ মাসের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাব তৈরি করা হয়েছে। এ হিসেবে ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছর ধরে জিডিপির আকার হয়েছে ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা বা ৪৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে এই আকার ছিল ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা বা ৪৫২ বিলিয়ন ডলার।
এ ছাড়া খাতভিত্তিক হিসাব করলে দেখা যায়, এবার সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। কমেছে কৃষি ও শিল্পে। চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ, গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। তুলনামূলক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ।
এ ছাড়া কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ খাতে তুলনামুলক কমেছে শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৭১ শতাংশ।
সারাবাংলা/জেজে/একে