ঢাকায় ৬৪% পরিবার নগর দরিদ্র, জ্বালানিতেই ব্যয় ১৫%
২ জুন ২০২৪ ২১:৫০
ঢাকা: রাজধানীতে বসবাসরত পরিবারের ৬৪ শতাংশই নগর দরিদ্র। নিম্ন আয়ের এসব পরিবার তার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ— প্রায় ১৫ শতাংশই ব্যয় করে থাকে রান্না ও বিদ্যুতের পেছনে।
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজের (বারসিক) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণার তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীর একটি পরিবার রান্না ও বিদ্যুৎ বাবদ গড়ে খরচ করে থাকে দুই হাজার ৩৮৯ টাকা, যা তাদের মোট আয়ের ১৫ শতাংশ।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গত দুই বছরের মধ্যে ৮ শতাংশ পরিবারে দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার ৫৪ শতাংশই ঘটেছে রান্নার লাকড়ি চুলা থেকে। রান্নার ধোঁয়ার কারণে গত ছয় মাসের মধ্যে ২২ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের গুরুতর কাশির সমস্যা হয়েছে।
বারসিকের প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়া মাত্র ১০ শতাংশ উত্তরদাতা ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি’ শব্দগুচ্ছের সঙ্গে পরিচিত। আবার ঢাকার নগর দরিদ্র পরিবারগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আগ্রহেরও অভাব রয়েছে।
রোববার (২ জুন) ডেইলি স্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে আয়োজিত ‘নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জ্বালারি ব্যবহার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণে চ্যালেঞ্জ: প্রেক্ষিত ঢাকা মহানগরী’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। আয়োজনে আরও ছিল বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) ও কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ)।
জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বস্তিবাসীর অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি প্রথমে বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। নগর দরিদ্রদের জন্য রাজউকের কোনো পরিকল্পনা নেই। গবেষণার ফলাফল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের কাছে পৌঁছাতে হবে। নগর নীতিমালা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। নগর নীতিমালাতে নগর দরিদ্রদের জ্বালানিসহ অন্যান্য অধিকার বিষয় বলা হয়েছে। তাই একে গুরুত্ব দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে, যা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি বায়ুমানের ব্যাপক অবনতির কারণ হতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমরা পরিকল্পনা করার সময় বস্তিবাসীদের বাদ দেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি গ্রহণের যে চ্যালেঞ্জ সেটি আমাদের এই বস্তিবাসীদের নিয়েই মোকাবিলা করতে হবে।
স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. নওজিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমরা যত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করছি তত বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তাই সচেতনতার বিকল্প নাই।
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এনার্জি, ইনভেস্টমেন্ট গ্র্যান্টস ও ব্লেন্ডেড ফাইন্যান্সের অ্যাটাচি প্রোগ্রাম ম্যানেজার কিয়ারা ভিদুসি বলেন, নবায়নযোগ্য শক্তিই ভবিষ্যৎ। তাই আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তিকে জনসাধারণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বস্তিবাসীদের ফরমাল হাউজিংয়ে নিয়ে আসতে না পারলে ইনফরমাল হাউজিংয়ে তাদের জ্বালানির সমস্যা সমাধান করা যাবে না। পরিকল্পনায় বস্তিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের সোলার ও গ্যাস সংযোগে ফরমাল অ্যাকসেস দিতে হবে।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক খসরু মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বস্তি এলাকায় বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে আমরা বস্তিবাসীদের জ্বালানি চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারি।
সংলাপটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারসিকের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মো. কামরুজ্জামান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বারসিকের নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন। সংলাপে বিভিন্ন বস্তি কমিউনিটির নারীরা তাদের সমস্যা তুলে ধরেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান টাউন প্ল্যানার মাকসুদ হাশেম, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ বিষয়ক উপপরিচালক মুহাম্মদ হাসনাত মোর্শেদ ভূঁইয়া, সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (এসএসিসিজেএফ) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট কেরামত উল্লাহ বিপ্লব, ক্যাপসের সায়েন্টিফিক অফিসার প্রকৌশলী নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারীসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর