চুয়াডাঙ্গায় মরুর প্রাণী দুম্বার খামার
৪ জুন ২০২৪ ০৮:৪২
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় বেড়ে উঠছে মরুর প্রাণী দুম্বা। সাধারণত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে যার বেশি বসবাস সেই দুম্বার খামার গড়ে তোলা হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায়। উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে ২০১৮ সাল থেকে গো গ্রিন সেন্টারে পরিকল্পিত উপায়ে দুম্বা প্রজনন খামারে পালিত হচ্ছে এবং এখান থেকে চাহিদামতো বিক্রি করা হচ্ছে দুম্বা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে এ জেলায় দুম্বা পালন ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে জানা যায়, দুম্বা প্রজনন খামারে বর্তমানে দুই ধরনের জাতের দুম্বা রয়েছে। এগুলো হলো মধ্যপ্রাচ্যের সাদা রঙের ‘আয়োসী’ ও আফ্রিকার সাদা ও খয়েরি রঙের ‘রেড মশাই’ জাত।
দুম্বা মূলত ছাগল-ভেড়া পালনের মতো পালন করা যায়। এরা প্রতিদিন ভূষি, খৈল, ডালের খোঁসা ও চালে কুঁড়া ও নেপিয়ার ঘাস খায়। তিন থেকে চার মাস বয়সের দুম্বার বাচ্চার ওজন হয় ১২ থেকে ১৫ কেজি।
দেড় বছর বয়সের ছাগী দুম্বার ওজন হয় ৪৫ কেজি এবং আড়াই বছরের পাঁঠা দুম্বার ওজন হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি। তারা গর্ভধারণের ৬-৭ মাস পর একটি অথবা দুইটি বাচ্চা প্রসব করে। তবে ১০ থেকে ১২ মাস বয়সে দুম্বা গর্ভধারণের উপযুক্ত হয়। ছয় মাস পর পর প্রত্যেকটি দুম্বার পিপিআর ও গোট পক্স টিকা এবং তিন মাস পর পর কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়। দুম্বা খামার থেকে ইচ্ছুক ক্রেতাদের একটি তালিকা করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দুম্বা বিক্রি করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের লাইভস্টক টেকনিক্যাল কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, দুম্বাগুলো খুবই নিরীহ। কোনো চিৎকার-চেঁচামেঁচি করে না। বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। বাচ্চাগুলো খুবই সুন্দর হয়। আমরা চেষ্টা করছি উপকারভোগীদের মধ্যে দুম্বা পালন ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ বলেনন, ২০১৮ সাল থেকে দুটি জাতের দুম্বা আমরা পুষছি। এই প্রজনন খামার থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুম্বার বাচ্চা সরবরাহ করছি। দুম্বা পালনের জন্য পারিবারিক পর্যায়ে ছোট ছোট খামার তৈরির জন্য আমরা আমাদের সদস্যদের উৎসাহিত করছি।
দুম্বা ক্রেতা আব্দুল লতিফ বলেন, ৪-৫ বছর ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে দুম্বা কিনছি। এখানকার দুম্বা গুলো খুবই মানসম্মত এবং ভালো। ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়ার কারণে দুম্বার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আমি ঢাকায় নিয়ে গিয়ে দুম্বা বিক্রি করি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন খাতে দুম্বা পালন একটি সম্ভবনাময় খাত। চুয়াডাঙ্গার ওয়েভ ফাউন্ডেশন আমাদের মাধ্যমে দুম্বা প্রজনন ও সম্প্রসারণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার অনেক খামারি ভেড়ার একটি জাতকে দুম্বা বলে বিক্রি করে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে। দুম্বা প্রজনন খামার থেকে প্রকৃত দুম্বা কিনে ক্রেতারা লাভবান হচ্ছে। মাংস সমৃদ্ধ দুম্বা পালন ও সম্প্রসারণ করতে পারলে এ জেলার খামারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং মাংসের চাহিদাও মেটাতে পারবে।
সারাবাংলা/এনইউ