একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েও ইতিহাস মোদি-বিজেপির
৫ জুন ২০২৪ ০৩:০০
শেষ হয়েছে প্রায় ১৪ ঘণ্টার অপেক্ষা। ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনের ফলই ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে অনুমিতভাবেই জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। একই সঙ্গে ফের দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বিজেপির শীর্ষ নেতা নরেন্দ্র মোদি। তবে গত দুই নির্বাচনের মতো এবার আর বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি জাতীয় এই নির্বাচনে। ফলে বিজেপিকে এবার সরকার গঠনে পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে জোটের ওপর।
ভারতের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো দল টানা তিনটি লোকসভা নির্বাচনে জয় পেল। এর আগে স্বাধীনতার পর টানা তিন মেয়াদে লোকসভা নির্বাচনে জয় পেয়েছিল কংগ্রেস। এদিকে জোটের মাধ্যমেও বিজেপি সরকার গঠন করলে ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুই এর আগে কেবল তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। মোদি হতে যাচ্ছেন তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি। এ জয়ের জন্য ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এ জয় বিকশিত ভারতের জয়।
মঙ্গলবার (৪ জুন) ভারতীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হয় দেড় মাস ধরে অনুষ্ঠিত সাত ধাপের লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা। রাত আড়াইটার দিকে সবগুলো আসনের ফলাফল শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে।
আরও পড়ুন- সরকার গঠনের ঘোষণা মোদির, বললেন বিকশিত ভারতের জয়
ফলাফলে দেখা গেছে, বিজেপি পেয়েছে সর্বোচ্চ ২৪০টি আসন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯৯টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৭টি আসন সমাজবাদী পার্টির। এ ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেস আসন পেয়েছে ২৯টি, দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) পেয়েছে ২২টি আসন।
লোকসভায় সরকার গঠনের জন্য ২৭২টি আসনের প্রয়োজন হওয়ায় এবার কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। অথচ আগের দুটি লোকসভা নির্বাচনেই বিজেপির ছিল সেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলটি পেয়েছিল ২৮২ আসন। পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালের নির্বাচনে তাকেও ছাপিয়ে ৩০৩ আসনে বিজয়ী হয়েছিল বিজেপি।
এককভাবে না পারলেও জোটের হিসাবে ঠিকই সরকার গঠনের উপযোগী সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে বিজেপি। তাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ২৯৫টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট আসন পেয়েছে ২৩১টি। অথচ এবার ‘৪০০ পার’ তথা ৪০০ আসনে জয়ের স্লোগান তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। শেষ পর্যন্ত টেনেটুনে জোট দিয়ে সরকার গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হয়েছে তাকে।
এদিকে জোটের হিসাবেও রয়েছে গোলমাল। বিজেপির জোটসঙ্গী অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশাম পার্টি (টিডিপি) লোকসভায় জয় পেয়েছে ১৬টি আসনে। আরেক জোটসঙ্গী বিহারের জনতা দল (জেডিইউ) জয় পেয়েছে ১২টি আসনে। এই দুটি দলের মিলিত আসনসংখ্যা ২৮টি, যেগুলো বাদ দিলে বিজেপির এনডিএ জোট সরকার গঠনের উপযোগী সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারিয়ে ফেলবে। ফলে এই দুই দলের শীর্ষ নেতা নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইড়ু এই মুহূর্তে ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
এবারের নির্বাচনে একদিকে যেমন বিজেপির একাধিপত্য খর্ব হয়েছে, একইসঙ্গে কংগ্রেসের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। বিজেপির হাত ধরে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়ছিল। গত দুই লোকসভা নির্বাচনের তাদের আসনসংখ্যা ছিল ৪৪ ও ৫২। বলতে গেলে ভারতের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিকই হয়ে পড়ছিল দলটি। এবারের নির্বাচনে ফের তারা পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পেয়েছে। ভারতের উদারনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক চর্চায় একে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির আধিপত্যের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ভোটের মাঠে। তবে সব জল্পনা-কল্পনা উড়িয়ে শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসই পশ্চিমবঙ্গে বিজয় নিশান উড়িয়েছে। অন্যদিকে উত্তর প্রদেশের মতো বিজেপি অধ্যুষিত রাজ্যে এবার জয় পেয়েছে কংগ্রেসের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সঙ্গী সমাজবাদী পার্টি। ইউপিতে কংগ্রেস নিজেও ছয়টি আসন পেয়েছে এবার।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে আরেকটি চমক হয়ে এসেছে বুথফেরত জরিপের ফলাফল। বুথফেরত জরিপ কখনোই ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল নয়। কিছু কিছু বুথফেরত জরিপ ভুল প্রমাণিত হলেও সাধারণত একে ভোটের ফলাফলের নির্দেশকই মনে করা হয়। কিন্তু ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বুথফেরত জরিপ রীতিমতো উলটে গেছে। বেশকিছু জরিপেই মোদির ‘৪০০ পার’ অর্থাৎ বিজেপির ৪০০ আসন পাওয়ার লক্ষ্য পূরণের আভাস দেওয়া হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ওই জোট ৩০০ আসনও পেরোতে পারেনি। বিজেপিও এককভাবে সরকার গঠনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
এর আগে গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয় ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট। এরপর নির্দিষ্ট বিরতিতে ১ জুন পর্যন্ত চলে সাত ধাপের ভোট। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে এবার মিলল সেই ভোটের ফলাফল।
সাত ধাপের এই লোকসভা নির্বাচনে ৯৭ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৪ কোটি ২০ লাখের মতো ভোটার। নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন-
- ধীরে ধীরে ব্যবধান কমাচ্ছে ইন্ডিয়া ব্লক
- ‘বাঁচা-মরার লড়াই’য়ে টিকে গেল কংগ্রেস?
- নরেন্দ্র মোদি: বিভক্ত ভারত ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে
- ভারতের লোকসভা নির্বাচন: সরকার গঠনে ‘দাবার ঘুঁটি’ তারা
- ‘৪০০ পার’ বহু দূর, বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাই হুমকির মুখে
- কাজে আসেনি রাম মন্দির, অযোধ্যাসহ ইউপিতে হেরে গেছে বিজেপি
সারাবাংলা/টিআর
ইন্ডিয়া জোট এনডিএ জোট কংগ্রেস জাতীয়-নির্বাচন টপ নিউজ নরেন্দ্র মোদি বিজেপি ভারতের নির্বাচন রাহুল গান্ধি লোকসভা নির্বাচন