Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘স্ত্রীকে ধর্ষণের প্রতিশোধ’ নিতেই কবিরাজকে হত্যা, গ্রেফতার ২

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৪ জুন ২০২৪ ২২:১৭

চুয়াডাঙ্গায় কবিরাজ হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতারের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার। ছবি: সারাবাংলা

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকর চন্দ্র ইউনিয়নের কালীভান্ডারদহ পিরতলী মাঠ থেকে উদ্ধার হয়েছিল কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই আলীর (৪৮) গলা কাটা মরদেহ। দুই দিনের মাথায় তার হত্যাকারী দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। বলেছেন, তাদের একজনের স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য ওই কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় কবিরাজ তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন জানতে পেরে হত্যা করা হয় কবিরাজকে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।

নিহত আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই আলী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের সুবদিয়া গ্রামে কাচারীপাড়ার মৃত দেসের আলীর ছেলে। তিনি কবিরাজি পেশায় যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি চাষাবাদ করতেন।

তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার দুজন হলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সুবদিয়া পূর্বপাড়ার আব্দুর রহমানের ছেলে রুবেল মিয়া (২৩) ও একই পাড়ার আনিসের ছেলে সোহেল রানা (২০)। তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত ধারালো ছুরি, মোটরসাইকেল ও নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, আব্দুর রাজ্জাককে হত্যার ঘটনায় তার ভাতিজা সানোয়ার হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। মামলায় গ্রেফতার দুজন পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ স্বীকার করেন। পরে তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। তারা চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১-এর বিচারক রিপন হোসেনের কাছে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

কবিরাজ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজাই আলী গত শুক্রবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় চা পান করতে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরদিন যুগিরহুদা থেকে কালীভান্ডারদহ যাওয়ার রাস্তায় পিরতলী মাঠে পাওয়া যায় আব্দুর রাজ্জাকের মরদেহ। এ ঘটনায় মামলা হলে তদন্তে নামে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (চুয়াডাঙ্গা সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় সদর থানা পুলিশ, চুয়াডাঙ্গা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন দল তদন্তে নেমে রুবেল মিয়া ও সোহেল রানার জড়িত থাকার তথ্য পেলে তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।

পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল ও সোহেল জানান, রুবেল মিয়া ও তার স্ত্রী চিকিৎসার জন্য রাজাই কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। শুক্রবার (৩১ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজাই কবিরাজ জিনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে রুবেল ও তার স্ত্রীকে সদর উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের নবগঙ্গা নদীর ব্রিজের কাছে পান বরজের কাছে নিয়ে যান। এরপর রুবেলকে সিগারেট আনতে দোকানে পাঠান। কিছুক্ষণ পর রুবেল ফিরে এসে তাদের না পেয়ে তার স্ত্রীর মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পান। ৩৫-৪০ মিনিট পর তার স্ত্রী ও রাজাই কবিরাজকে পান বরজের কাছে দেখতে পান রুবেল। তার সন্দেহ হয়, কবিরাজ তার স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কিছু করেছেন।

দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরও বলেন, পরে রুবেল বাড়ি ফি তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। একপর্যায়ে স্ত্রী তাকে জানান, রাজাই কবিরাজ তাকে ধর্ষণ করেছেন। এটা জানার পরই রুবেল তার সহযোগী সোহেলকে নিয়ে রাজাই কবিরাজের বাড়ি যান। চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রীর জিন তাড়ানোর কথা বলে কবিরাজকে কৌশলে কালীভান্ডারদহের দিকে নিয়ে যান। মোটরসাইলের পেছনে বসা রুবেল তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে রাজাই কবিরাজকে হত্যা করেন। এরপর তাকে নির্জন রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাছপালা দিয়ে ঢেকে বাড়ি ফিরে যান।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) রিয়াজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেকেন্দার আলী উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/টিআর

কবিরাজ হত্যা চুয়াডাঙ্গা হত্যাকারী গ্রেফতার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর