স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ: এবার গ্রাহকের বিরুদ্ধে জিডি
৫ জুন ২০২৪ ২৩:৫৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে লকার থেকে প্রায় ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গায়েবের অভিযোগ তোলা গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারীর বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ না করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে ইসলামী ব্যাংকের নগরীর চকবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ ইউনুছ চকবাজার থানায় জিডি করেন। ইউনুছ লকার ইনচার্জের দায়িত্বে আছেন।
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ না করে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংককে দায়ী করে নানা কথাবার্তা বলার কারণে গ্রাহকের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। আমরা জিডি রেকর্ড করেছি। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থার জন্য সেটি প্রক্রিয়াধীন আছে।’
গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী চট্টগ্রাম নগরীর চট্টেশ্বরী রোডের বাসিন্দা। তিনি প্রয়াত চিকিৎসক এম এ বারীর স্ত্রী।
ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ‘আত্মসাতের’ অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) চারজনের বিরুদ্ধে রোকেয়া আক্তার বারী গত ৩ জুন থানায় অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) মোহাম্মদ মনিরুল মওলা, কোম্পানি সেক্রেটারি জে কিউ এম হাবিবউল্লাহ, ব্যাংকের চকবাজার শাখার সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাখা ব্যবস্থাপক এস এম শফিকুল মওলা এবং লকারের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউনুছ।
ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসংক্রান্ত অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শিডিউলভুক্ত হওয়ায় সেটি গ্রহণ করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপের জন্য দুদকে পাঠিয়ে দেন চকবাজার থানার ওসি।
অভিযোগে রোকেয়া আক্তার বারী উল্লেখ করেন, তিনি এবং তার মেয়ে নাসিয়া মারজুক যৌথ মালিকানায় ২০০৬ সাল থেকে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় লকারটি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে আসছিলেন। লকারে নাসিয়া ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রায় ১৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার গচ্ছিত ছিল। তিনি গত ২৯ মে দুপুরে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন, তার জন্য বরাদ্দ করা লকারটি খোলা অবস্থায় আছে। সেখানে রাখা স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে প্রায় ১৪৯ ভরি ‘চুরি’ হয়ে গেছে।
স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে ছিল ৬০ ভরি ওজনের ৪০পিস হাতের চুড়ি, ২৫ ভরি ওজনের চার সেট জড়োয়া, ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট, ২৮ ভরি ওজনের সাতটি গলার চেইন, ১৫ ভরি ওজনের ২৫টি আংটি এবং ১১ ভরি ওজনের ৩০ জোড়া কানের দুল।
পরদিন ইসলামী ব্যাংকের দায়ের করা জিডিতে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রাহক ও তার মেয়ে লকারটি বার্ষিক ভাড়ার ভিত্তিতে ব্যবহার করে আসছিলেন। লকার হিসাব তিনি ও তার মেয়ে যে কোনো একজনের স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে বলে তারা ঘোষণা দেন। নিয়ম অনুযায়ী মূল চাবি গ্রাহকের কাছে গচ্ছিত ছিল। লকারে কী ধরনের মালামাল রাখা ছিল, সেটি গ্রাহক ছাড়া আর কারও জানার সুযোগ নেই।
গত ৮ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে গ্রাহক রোকেয় আক্তার বারী ব্যাংকে সেই লকার ব্যবহারের জন্য যান। তখন মোহাম্মদ ইউনুছ তাকে ‘মাস্টার কী’ দিয়ে লকার আনলক করে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান। তিনি নিজের চাবি দিয়ে লকার খুলে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করে চলে যান।
জিডিতে উল্লেখ আছে, এরপর ২৯ মে গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী আবার লকার ব্যবহারের জন্য ব্যাংকে যান। দুপুর ১টা ২২ মিনিটে ইউনুছ ও গ্রাহক লকার রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় গ্রাহক তাকে জানান, নির্ধারিত লকারের শার্টার খোলা। ইউনুছ লকার পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান, লকারের শার্টারের লিভার ‘লকড’ অবস্থায় থাকলেও সেটি নির্ধারিত ছিদ্রে প্রবেশ না করার কারণে লকারের দরজা আংশিক খোলা।
এর কিছুক্ষণ পর গ্রাহক মৌখিকভাবে তাদের জানান যে, লকারে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নেই। পরবর্তী সময়ে গ্রাহকের অনুরোধে চকবাজার থানা পুলিশ লকার কক্ষ পরিদর্শন করে স্থিরচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ নেন। কিন্তু এরপরও লিখিত কোনো অভিযোগ না করে গ্রাহক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ইসলামী ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার প্রয়াস চালাচ্ছেন উল্লেখ করেছেন মোহাম্মদ ইউনুছ। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর আইননানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করেছেন জিডিতে।
এদিকে, লকারের লক সঠিকভাবে বন্ধ না করার দায় গ্রাহকের ওপর বর্তায়– জিডিতে বলছে ইসলামী ব্যাংক।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম