ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা
৬ জুন ২০২৪ ২০:৫৬
ঢাকা : ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সর্বকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ এক বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাক, আর গত তিন মাসে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের মার্চে ছিল খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ হাজার কোটি টাকা এবং গত ৩১শে ডিসেম্বরে শেষে খেলাপি ঋণ ছিলো এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণী থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩১শে মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ১১.১১ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত মেনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন চারটি ব্যাংককে চলতি জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক চারটি হলো- সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংক। তবে মার্চ পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এই সীমার মধ্যে আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মার্চ শেষে ঋণের পরিমাণ তিন লাখ ১২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এই ঋণের ২৭ শতাংশ খেলাপি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ ১২ লাখ ২১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা; যার ৭.২৮ শতাংশ খেলাপি। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঋণের ১৩.৮৮ খেলাপি, আর বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার ৫.২০ শতাংশ।
বাংলাদেশের জন্য দেওয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমানো। ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। কিন্তু খেলাপি না কমে উল্টো বেড়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ঋণগ্রহিতাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের পরিবর্তে ঋণ যাতে দিতে না হয় সেজন্য একের পর এক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষকরে সুদ কমিয়ে পরিশোধেরে মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার ঋণের কিস্তির পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আইএমএফ‘র শর্তের কারণে খেলাপি ঋণ যাতে না বাড়ে সে জন্য নানান ধরনের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। তারপরেও খেলাপি ঋণ কমছে না। এতে বোঝা যায় দেশে খেলাপি ঋণের অবস্থা কতটা ভয়াবহ।
তিনি বলেন, ‘সঠিকভাবে ঋণের হিসাব করলে দেশে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হবে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে