পরিকল্পিতভাবে বাজেট দিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
৭ জুন ২০২৪ ১৯:৩৯
ঢাকা: ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এবারের বাজেট অন্তত পরিকল্পিতভাবে দিয়েছি। এই বাজেটে মানুষের মৌলিক অধিকার কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দেশীয় শিল্প, সামাজিক নিরাপত্তা এগুলোকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যা মানুষের জীবনকে উন্নত করার নিশ্চয়তা দেবে।’
শুক্রবার (৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে আমরা কাজ করেছি বলেই আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রামপর্যায় পর্যন্ত মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা দেখা দিয়েছে। আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ ভাগের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলাম। মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছি। কিন্তু পচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে টানা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল; জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া, প্লাস তত্ত্বাবধায়ক সরকার; কেউ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই এই পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে।’
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গতকাল বাজেট দিয়েছি। বিএনপির আমলে সর্বশেষ বাজেট মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। কেয়ারটেকার সরকার বোধহয় দিয়েছিল আটষট্টি হাজার কোটি টাকা। আমরা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছি।’
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা প্রশ্ন এসেছে। কালো টাকা নিয়ে। আমি শুনি অনেকে বলে কালো টাকা; তাহলে আর কেউ ট্যাক্স দেবে না। ঘটনা কিন্তু তা না। এখন এক কাঠা জমি যার সেই কোটিপতি। কিন্তু সরকারি যে হিসাব সেই হিসাবে কেউ বেচে না একটু। বেশি দামে বেচে। কিন্তু টাকা উদ্ধৃত হয়। এই টাকাটা তারা গুঁজে রাখে। তা গুঁজে যেন না রাখে সামান্য কিছু টাকাটা দিয়ে টাকাগুলো আসল পথে আসুক। সেখানে আমি ঠাট্টা করে বলি যে মাছ ধরতে গেলে তো আধার দিতে হবে, দিতে হয় না? আধার ছাড়া তো মাছ আসবে না৷ সেরকমই একটা ব্যবস্থা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি আগেও হয়েছে। সেই কেয়ারটেকার আমলেই শুরু করেছিল। আমরা এবারও সেই সুযোগটা দিচ্ছিলাম; ঠিক আছে তোমরা এই অল্প ট্যাক্স দিয়ে আগে টাকাটা ব্যাংকে নিয়ে আসো। অন্তত টাকাটা উদ্ধার হোক। সেই ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে। এটি নিয়ে নানাজনের নানা কথা।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেগুলো মানুষের প্রয়োজন সেখানে কিন্তু ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। প্রত্যেকটা খাদ্যপণ্য, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ক্যান্সার বা ডায়ালাইসিসসহ সমস্ত কিছুর ওপর থেকে ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছি। একদিকে স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি উৎপাদন খাদ্য নিরাপত্তা দেশীয় শিল্পকে প্রাধান্য দেওয়া দেশীয় শিল্পের উৎপাদন যেগুলো ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ কাঁচামাল সেগুলোর ওপর আমরা সুরক্ষা দিয়েছি। সেইভাবে এবার আমরা কিন্তু বাজেটটা অন্তত পরিকল্পিতভাবে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি কারও ভালো লাগে, কারও ভালো লাগে না। আমাদের দেশে তো আছেই কোনো কিছুই ভালো লাগে না।’
বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাজেট ঘাটতি নিয়েও অনেকে কথা বলে। আমি সরকারে আসার পর, এটি ২১তম বাজেট দিলাম। সবসময় আমরা ৫ শতাংশ বাজেট ঘাটতি রাখি। এবারও ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রাখা হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশে এমনকি উন্নত দেশেও আছে। আমেরিকায় খবর নেন বাজেট ঘাটতি কত। উন্নত দেশেও এর চেয়ে বেশি বাজেট ঘাটতি থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে খাদ্যমূল্য। উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টির কারণে আলুবীজ নষ্ট হয়ে গেছে। তখন এমন অবস্থা বৃষ্টি চলছিলই। কিন্তু তারপরও আমাদের যে জমি আছে, আমরা যদি উৎপাদনমুখী হই, খাদ্যে আমাদের অভাব থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই আমাদের পরিকল্পনা করে চলতে হবে। কিছু ভালো লাগে না যেই গ্রুপ আছে তাদের ভালো না লাগাই থাক, ওগুলোতে কান দেওয়ার দরকার নাই। এটি নতুন না। যখন অস্বাভাবিক সরকার আসে, তারা খুব খুশি হয়। মার্শাল ল এলে খুশি ছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারে খুশি ছিল। তাতে তাদের নাকি গুরুত্ব থাকে। আর জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের নাকি মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়ন করব কীভাবে, দাঁড়িপাল্লায় দাঁড় করিয়ে মাপব নাকি? কেয়ারটেকারের সময় দেখেছি তাদের চরিত্র, কীভাবে তেল মারে অগণতান্ত্রিক সরকারকে। আমাদের ওই তেল মারা গোষ্ঠীর দরকার নেই।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম। আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এটি তার প্রস্তাবিত প্রথম বাজেট। তার এই প্রস্তাবিত বাজেটের আকার প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে এই বাজেট সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেবেন অর্থমন্ত্রী।
দেশের ৫৪তম এই বাজেটে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে সীমিত রাখার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
সারাবাংলা/এনআর/একে