চাহিদার চেয়েও কোরবানির পশু বেশি, তবু গুনতে হবে বাড়তি দাম
৮ জুন ২০২৪ ১৪:০৭
রাজশাহী: রাজশাহীতে এবছর চাহিদার চেয়েও কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে। তবে এবার উৎপাদন খরচ বাড়ায় কোরবানির পশু গতবারের চেয়েও বাড়তি দামে কিনতে হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তবে এবার জেলায় দেড় হাজার কোটি টাকার কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে চলছে কোরবানির পশুর হিসাব-নিকাশ। রাজশাহীর সাপ্তাহিক হাটে গরুর সরবরাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি বাইরের ব্যবসায়ীদের আগমন বেড়েছে। একটু কম দামে গরু কিনতে অনেকে অগ্রিম টাকা দিচ্ছেন। অনেক খামারি বাজারদর যাচাইয়ে হাটে যাচ্ছেন। তবে হাটগুলো এখনও জমে উঠেনি। হাটের ইজারাদার বলছেন, কয়েকদিনের মধ্যে হাট পুরোদমে জমে উঠবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর জানিয়েছে, রাজশাহীতে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। জেলায় এবার যে পরিমাণ পশুর চাহিদা রয়েছে, লালন-পালন করা হয়েছে তার চেয়েও বেশি। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলার চাহিদাও মেটাবে রাজশাহীর গরু-ছাগল। চলতি বছর কোরবানি ঘিরে রাজশাহীতে চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে ১৭ হাজার খামারে ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এসব পশু লালন-পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি গরু, তিন হাজার ৭৬৯টি মহিষ ও তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি ছাগল রয়েছে।
অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত বছর জেলায় তিন লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু কোরবানি করা হয়। এবারও কোরবানির পশুর চাহিদা একই রয়েছে। ফলে বর্তমানে জেলায় চাহিদার তুলনায় এক লাখ ৪১ হাজার ২১৯টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
খামারিরা বলছেন, কোরবানির পশুর দাম এবারও বেশি হবে। কারণ উৎপাদন খরচ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়ায় তাদের লাভের পরিমাণ কমবে। তবে কেউ লোকসান দিয়ে বিক্রি করবে না। এখন কিনলে কিছুটা কমে বিক্রি হবে। কোরবানির হাটে তারা প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে পশু বিক্রি করবেন না।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের রণহাটের খামারি আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমার খামারে ২০ গরু আছে। যা গেল বছরের অক্টোবর থেকে পালন করছি। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার গোখাদ্যের দাম বেশি। সঙ্গে অন্যান্য খরচও বেড়েছে। কোরবানির ঈদের কয়েকদিন আগে হাটে তুলবো। খামারে বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা আসছেন। তারা দেখছেন গরুগুলোকে। কিন্তু কাঙ্খিত দাম বলছেন না। আর প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পেলে বিক্রি করবো না।’
গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহীর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দুয়েকটি করে পোষা গরু আছে। এগুলো কোরবানির জন্য লালন-পালন করা হয়েছে। ব্যবসায়ী সাজেদুর রহমান বলেন, খামারের চেয়ে বাড়িতে পোষা গরুর চাহিদা বেশি। অনেকে বাড়ি থেকে গরু বিক্রি করেন। আবার হাটেও নিয়ে আসেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের চোখও বাড়ির পোষা গরুদের দিকে। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এবার দামও বেশি। ফলে আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার বেশি দামে পশু কিনতে হবে ক্রেতাদের।
রাজশাহীর বড় পশুর হাট ‘সিটি হাট’। ঈদ ঘিরে এই হাটে পশুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসছেন। তবে এখনও সেভাবে বেচাকেনা শুরু হয়নি।
সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, সপ্তাহে রোববার ও বুধবার হাট বসে। কোরবানির পশু হাটে আসতে শুরু করেছে। তবে এখনও বেচাকেনা জমে উঠেনি। রোববার থেকে প্রতিদিন বসবে হাট। ঈদের দুয়েকদিন আগে হাটে কেনাবেচা বাড়ে।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, এবার উৎপাদন খরচ বেশি। গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। গতবারের চেয়ে পশুর দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক। তবে দাম অতিরিক্ত হবে না এটা বলা যায়। রাজশাহীসহ সারাদেশের চাহিদা মেটানো যাবে এই পশু দিয়ে। জেলায় এবার দেড় হাজার কোটি টাকার কোরবানির পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এনইউ