Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট প্রতিক্রিয়া: এবারও বৈষম্যের শিকার রংপুর, বরাদ্দ নিয়ে হতাশা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৮ জুন ২০২৪ ২০:৫৩

রংপুর: পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিবছরই বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে এলেও ঘটে ভিন্নতা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও বাজেটে বৈষম্যের শিকার রংপুর অঞ্চলের মানুষ। প্রস্তাবিত বাজেটে রংপুর বিভাগের অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোনো বরাদ্দ রাখা তো হয়নিই উল্টো সিটি করপোরেশনের বাজেটও শূন্য।

উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো বরাদ্দই নেই স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও কৃষিতেও। বাজেটে মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে উত্তরের বাতিঘর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। তাই এবারের বাজেটে আশার চেয়ে হতাশার পাল্লা ভারি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রংপুর অঞ্চলের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট বাজেট। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দৃষ্টির অনুরোধ তাদের।

গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়লেও রংপুর অঞ্চলের বাজেট কমে আসে। বাজেট ঘোষণার আগে থেকে এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত রংপুর অঞ্চলকে বিশেষভাবে দেখার অনুরোধ জানিয়ে সভা-সেমিনার, মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হলেও তেমন কোনো আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। প্রতি অর্থবছরে বাজেট এডিবিতে বিভাগ ভিত্তিক বরাদ্দ থাকে তলানিতে। বেকারত্বের হারের দিকে রংপুর বিভাগ সবার উপরে থাকলেও বেকারত্ব দূরীকরণে তেমন কোনো বরাদ্দই থাকে না। এ ছাড়া, শিল্পায়নের দিক দিয়ে রংপুর অনেক পিছিয়ে।

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় অর্থনৈতিক অঞ্চলে বরাদ্দ শূন্য। এ ছাড়া, রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য কোনো বরাদ্দই রাখা হয়নি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্প ও কৃষিতে যা বাজেট রাখা হয়েছে সেটি তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ নয়।

এ নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘২০৪ বর্গ কিলোমিটারের বৃহৎ এই এলাকায় উন্নয়ন করতে গেলে অনেক টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। সেখানে এই বাজেটে বরাদ্দ শূন্য। বাজেট না পেলে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব নয়।’

আর গত বাজেটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২০ কোটি টাকা পেলেও এবারের বাজেটে মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এদিকে, রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলেও রাখা হয়নি কোনো বরাদ্দ। এবার দেশের বিশেষ সড়ক যোগাযোগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। অথচ রংপুর বিভাগের জন্য সড়ক যোগাযোগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ২০০ কোটি টাকা। তাই এবারের বাজেটে রংপুর অঞ্চলকে তলানি বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে হতাশা আর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রংপুর অঞ্চলের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হলে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। শিল্পায়নের দিক দিয়ে রংপুর অনেক পিছিয়ে। হাতে গোনা দু–চারটি ক্ষুদ্র শিল্প ছাড়া শিল্পায়ন বলতে রংপুরে কিছুই নেই। তাই শিল্পায়ন ও বাণিজ্যে বিনিয়োগ ও কর্মস্থান তৈরিতে বাজেটে আলাদা বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তারা।

এ ছাড়া, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এ বাজেটেই বিশেষ বরাদ্দ দেওয়াসহ শিক্ষা বাজেটে পিছিয়ে থাকা রংপুরের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো ও সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে বাজেটকে জনবান্ধব করার আহ্বান সবার।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশীদ বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের কৃষিসহ অন্যান্য শিল্পখাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব। তবে রংপুর অঞ্চলের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজন তা এই এলাকার মানুষকে প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করতে পারলে সেটিকে এগিয়ে নিতে সরকারের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব হবে।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাজেট হওয়া প্রয়োজন স্মার্ট। বরাদ্দ প্রয়োজন চাহিদা অনুযায়ী। যেখানে যেমন বরাদ্দ দরকার সেখানে তেমন দেওয়া উচিত। কিন্তু অন্যন্য বিভাগের থেকে রংপুর বিভাগ অনেক পিছিয়ে। বর্তমান বাজেটে রংপুর বিভাগের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। বরাবরের মতো রংপুর বিভাগ বৈষ্যমের শিকার।

নদী নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘তিস্তা বাচাঁও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান বলেন, ‘রংপুর বিভাগ কৃষি অঞ্চল। দিন দিন সারের দাম বৃদ্ধি পায়, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় কিন্তু খাদ্য-শস্য বিক্রি করতে গেলে দাম পায় না কৃষক। আজ আমরা কৃষকদের বাঁচাতে পারছি না। বৈষম্য শুধু বরাদ্দে নয়, আমাদের উৎপাদনেও আছে।’

উত্তরাঞ্চলকে বাঁচাতে এই বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে না কেন। আমরা চাই এ বিষয়ে বিশেষ নজর রাখুক প্রধানমন্ত্রী।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগরের সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলকে এগিয়ে নিতে সরকারকে ‘থোক’ বরাদ্দ দিতে হবে। এ অঞ্চলে কোনো শিল্পায়ন গড়ে ওঠেনি, ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেনি। এখানে বিনিয়োগের তেমন সুযোগ না থাকায় কেউ বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এ বাজেটকে জনবান্ধব করতে হবে।’

সংশোধিত বাজেটে রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বৃহৎ শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে দ্রুত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু হেনা রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র নিরসন ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রংপুরে প্রস্তাবিত স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনসহ উত্তরাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ‘নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি’ গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুর বিভাগের শিল্পায়নের জন্য ট্যাক্স হলি ডের মেয়াদ ১৫ বছর করা ও ‘আলাদা বাজেট বরাদ্দ’র বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ছিল।”

চেম্বার নেতা মনে করেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে অর্থের সুষম বণ্টন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতামূলক কর্মসূচি ও কৌশল এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে। যাতে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে পারে।

সারাবাংলা/পিটিএম

টপ নিউজ বাজেট ২০২৪-২৫ বাজেট প্রতিক্রিয়া রংপুর বিভাগ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর