প্রস্তাবিত বাজেট জুয়েলারি শিল্পের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ: বাজুস
৯ জুন ২০২৪ ১৮:৫১
ঢাকা: প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট জুয়েলারি শিল্পের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন– বাজুস। সংগঠনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
রোববার (৯ জুন) রাজধানীর বসুন্ধারা সিটিতে বাজুস অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ সব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্য সচিব পবন কুমার আগরওয়াল।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের পক্ষ থেকে প্রাক-বাজেট বৈঠকগুলোতে ব্যবসায়ীদের সমস্যা ও দাবি পূরণে দফায় দফায় আশ্বাস দেওয়া হলেও, প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোন প্রতিফলন নেই। বারবার বৈধ পথে সোনার বার, কয়েন ও সোনার অলংকার তৈরি ও রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদান করা হবে বলা হলেও, এই খাত সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির ওপর অসম শুল্ক হারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে জুয়েলারি অলংকার বিক্রির ওপর রয়েছে ৫ শতাংশ ভ্যাট। ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিত উৎসে কর হারের বোঝা। এভাবে অপরিকল্পিত আমদানি শুল্ক-কর হার, শুল্ক-কর এবং কাঠামোগত শুল্ক ও শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের উদাসীনতা জুয়েলারি শিল্পকে পিছিয়ে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও বুদ্ধিদীপ্ত দূরদৃষ্টির কারণে আজকের বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। সরকারের সাফল্য যাত্রায় অংশীজন হতে চেষ্টা করছে বাজুস। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, জুয়েলারি শিল্প সম্পর্কিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-(২০১৮) সংশোধিত-২০২১’ সংশোধনের ৩ বছর পরেও বাস্তবায়ন হয়নি। অসম শুল্ক-কর কাঠামো, প্রাথমিক কাচাঁমাল ও মেশিনারিজ আমদানীতে কালক্ষেপণ ও অতিরিক্ত শুল্কব্যয়, সঠিক নীতিমালার অভাব এই খাতকে দেশীয় অর্থনীতি থেকে পশ্চাৎপদেই ধাবিত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের জুয়েলারি খাতকে গার্মেন্টস শিল্পের ন্যায় রপ্তানীমুখী শিল্প হিসাবে পরিচিতির লক্ষ্যে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা ও মেশিনারিজ আমদানিতে শুল্ক কর রেয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরি গহনা স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে সমানভাবে সমাদৃত। কিন্তু এই খাতের সঠিক পরিচর্যার অভাবে স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীগণ কাজের অভাবে দুঃখ-দুর্দশায় জীবন-যাপন করছেন। স্থানীয় কারিগররা পেশা বদল করে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এই সংকট মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৩ এপ্রিল প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে বাজুস থেকে ১৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একটি দাবিও পূরণ হয়নি। ফলে জুয়েলারি শিল্পকে হুমকির মুখে পড়েছে। বাজুস আবারও প্রস্তাব করছে সোনার অলংকার বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাট হার কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হোক। তাতে একদিকে ক্রেতা সাধারণ ভ্যাট প্রদানে উৎসাহিত হবেন, অন্যদিকে জুয়েলারি খাত থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হবে। এ পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বাজুসের ১৫টি প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাজুসের পক্ষ থেকে আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। গত কয়েকটি বছরের প্রাক-বাজেটে বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বাজুসের দাবি পূরণের অঙ্গীকার করলেও, বাস্তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। জুয়েলারি শিল্পে যখন নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার উৎসাহ প্রদান করছে বাজুস, তখন এনবিআর নীতি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে। জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্তকরণের সময় আমাদের প্রস্তাবসমূহ পুনঃবিবেচনার দাবি করছি। চূড়ান্ত বাজেটে আমাদের দাবির প্রতিফলন না হলে, জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া গতি থাকবে না।
সারাবাংলা/জিএস/একে