পুলিশের ওপর হামলা-আসামি ছিনতাই, উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে মামলা
৯ জুন ২০২৪ ২০:৩২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোজাম্মেল হকসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে আনোয়ারা থানায় কর্ণফুলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) সোহানুর রহমান সোহাগ সারাবাংলাকে জানান, বেআইনি জনতাবদ্ধ হয়ে পুলিশের কর্তব্যকাজে বাধাদান, আসামি ছিনিয়ে নেওয়া, পুলিশের ওপর হামলা করে গুরুতর জখম এবং সরকারি গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ৪৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ থেকে ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হককে। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে ছিনিয়ে নেওয়া মো. মোজাম্মেলকে।
শনিবার (৮ জুন) রাতে আনোয়ারা উপজেলার চাতরি-চৌমুহনী এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পুলিশের ওপর হামলা করে মোজাম্মেলকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে।
এর আগে, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আনোয়ারা সেন্টার এলাকায় বাজেটকে স্বাগত জানানোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিবদমান সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থল আনোয়ারা উপজেলা হলেও প্রশাসনিকভাবে সেটি নগর পুলিশের বন্দর জোনের কর্ণফুলী থানার আওতাধীন। সংঘর্ষের পর কর্ণফুলী থানায় মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার আসামিদের ধরতে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা থানা পুলিশ যৌথভাবে শনিবার রাতে অভিযান শুরু করে।
পুলিশের ভাষ্য মতে, রাত ১১টার দিকে আনোয়ারায় টানেলের প্রবেশমুখে ভোজনবাড়ি নামে একটি রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে মোজাম্মেলকে পায় পুলিশ। তাকে আটক করতে গেলে নেতাকর্মীরা বাধা দেয়। এ সময় রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বেরিয়ে আসেন। এর পর তিনিসহ নেতাকর্মীরা মিলে আসামি মোজাম্মেলকে হাতকড়া পরা অবস্থায় ছিনিয়ে নেন। এক পর্যায়ে শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত হয়ে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ হামলা শুরু করে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ ১৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। হামলায় আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ ও কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেনসহ ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে নেওয়ার পর চৌমুহনী বাজারে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের স্পেশাল রিজার্ভ ফোর্সের (এসআরএফ) একটি গাড়ি আটকে ভাঙচুর করে নেতাকর্মীরা। এতে এসআরএফ’র আরও দুই কনস্টেবল আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ ১০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি কাজী মোজাম্মেল হক আনোয়ারা উপজেলার আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। গত ২৯ মে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের তৃতীয় দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য। গত দু’বার তিনি ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এবার তার মন্ত্রিসভায় জায়গা হয়নি।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সংরক্ষিত আসনের তিনবারের সাংসদ ওয়াসিকা আয়শা খানের এলাকাও আনোয়ারা-কর্ণফুলী। তিনি এবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন।
বারাবরের মতো আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার নেতাকর্মীরা জাবেদ-ওয়াসিকা বলয়ে বিভক্ত। মন্ত্রিসভার নতুন সমীকরণে এতদিন কোণঠাসা হয়ে থাকা ওয়াসিকার অনুসারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে, জাবেদের অনুসারীরা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম