বাবার ওপর প্রতিশোধ নিতে ছেলেকে খুন, ১ জনের মৃত্যুদণ্ড
৯ জুন ২০২৪ ২১:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বাবার সঙ্গে বিরোধের জেরে তার শিশুসন্তানকে নির্মমভাবে খুনের মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত আরেক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস দেন।
রোববার (৯ জুন) দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রবিউল আউয়াল এ রায় ঘোষণা করেন। জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডিত কাজী নাহিদ হোসেন পল্লবের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নে। রায়ে খালাস পেয়েছেন তার ছোট ভাই কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লব।
২০১০ সালের ২৩ নভেম্বর মীরসরাইয়ের মঘাদিয়ায় ধানক্ষেত থেকে পাঁচ বছর বয়সী কাজী মশিউর রহমান ওয়াসিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওয়াসিম ওই এলাকার বাসিন্দা কাজী মোশাররফ হোসেন বাবুলের ছেলে। দণ্ডিত পল্লব বাবুলের আপন চাচাতো ভাই।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাচাতো ভাইদের মধ্যে জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এর পর বাবুল ও পল্লব উভয়ে দুবাইয়ে ছিলেন। সেখানে পল্লবের সঙ্গে বাবুলের ব্যবসায়িক বিরোধ তৈরি হয়। অবৈধভাবে অবস্থান করার অভিযোগে পল্লবকে দুবাইয়ের পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ছাড়া পেয়ে সে বাংলাদেশে ফেরত আসে। পল্লবের সন্দেহ হয়, বাবুল তাকে ধরিয়ে দিয়েছিল। সন্দেহের বশে সে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে।’
‘পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর বিকেলে ওয়াসিমকে তুলে নির্জন ছনখোলায় নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পল্লব। এরপর আবার সারা শরীরে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তার লাশ ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। নিখোঁজ ডায়েরির ভিত্তিতে পরদিন পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ধানক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাবুল দ্রুত দেশে ফিরে আসেন।’
মামলার নথিতে থাকা তথ্যানুযায়ী, ওয়াসিমকে খুনের ঘটনায় তার চাচা কাজী একরামুল হক বাদী হয়ে মীরসরাই থানায় পল্লব ও বিপ্লব, তাদের বাবা ফজলুল কবির ও মা নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ পল্লবকে গ্রেফতার করে। পল্লব আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়।
পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। বিচার চলাকালে ফজলুল কবির ও নুরজাহান বেগম মারা যান। তাদের বিচার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন জানান, রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২১ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত এ রায় দেন। দণ্ডবিধির ৩০২ ও ২০১ ধারায় দেওয়া রায়ে আদালত কাজী নাহিদ হোসেন পল্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই রায়ে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। তবে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তার ভাই কাজী ইকবাল হোসেন বিপ্লবকে বেকসুর খালাস দেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় কারাগারে থাকা পল্লবকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। রায়ের পর সাজামূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান দেলোয়ার হোসেন।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম