কুবির ৮ বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষের ফল কবে, জানে না কেউ
১০ জুন ২০২৪ ১১:৫৯
কুমিল্লা: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ৮টি বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ফল না পাওয়ায় তাদের শিক্ষাজীবন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যারা দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষা নিতে চান, তাদের সেই প্রক্রিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। চাকরির পরীক্ষাতেও আবেদন করতে পারছেন না।
ফলাফল প্রকাশ করতে কেন দেরি— তা নিয়েও এসেছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য। শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের আগের সব পরীক্ষার ফলাফলসহ মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হওয়ায় ফল তৈরিতে দেরি হচ্ছে। কোনো কোনো বিভাগ অনেক আগেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে ফল জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার কারণে ফল প্রকাশ করতে দেরি হচ্ছে।
কুবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বিভাগের মধ্যে ১১টি বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও ৮ বিভাগের ফলাফল এখনো প্রকাশ হয়নি। বিভাগ ৮টি হলো— কলা ও মানবিক অনুষদের ইংরেজি বিভাগ; সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ; বিজ্ঞান অনুষদের গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, ফার্মেসি, রসায়ন ও পরিসংখ্যান বিভাগ; এবং আইন অনুষদের আইন বিভাগ।
পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া অন্য সব বিভাগ রেজাল্ট পেয়ে গেছে। অথচ আমরা রেজাল্টের জন্য বসে আছি। এতে আমাদের ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সব দিক দিয়েই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। না পারছি কোনো চাকরির জন্য আবেদন করতে, না পারছি বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য আবেদন করতে। সামনে সরকারি চাকরির বড় কয়েকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আছে। এখন মনে হচ্ছে সেগুলোতেও আবেদন করতে পারব না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, স্নাতকের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রতিটি শিক্ষাথীর জীবনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের পরীক্ষাসহ সব কিছু শেষ করেছি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। এরপর পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু ফলাফল দেওয়া হচ্ছে না। পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে একাধিকবার বলার পরও উনি আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
কুবির এই শিক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই আমাদের কোভিড-১৯ মহামারির সময়কার কিছু জট রয়েছে। এখন রেজাল্ট নিয়েও জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ হিসাবে ২০২২ সালে স্নাতক শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ ২০২৪ সালের অর্ধেক পেরিয়ে গেলেও রেজাল্ট পেলাম না!
কুবি পরীক্ষা বিধিমালা অনুযায়ী, সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য আট সপ্তাহ (৫৬ দিন) এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য ১০ সপ্তাহ (৭০ দিন) সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক পরীক্ষার পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ফল প্রকাশ হয়নি। শুধু তাই নয়, ফল কবে প্রকাশ পেতে পারে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মিলছে না কারও কাছ থেকেই।
জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাছান খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত ফল প্রকাশ করার। শিক্ষার্থীদের ইমপ্রুভমেন্ট রেজাল্ট পেতে একটু সময় লাগছে। এ কারণে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে দেরি হচ্ছে। ঈদের বন্ধের আগে আমরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতরে ফলাফল জমা দিয়ে দেবো।’
পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আফরিনা আক্তার মিশু বলেন, স্নাতক চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হলে সব সেমিস্টারের ফলাফল প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষার্থীদের ইমপ্রুভমেন্টের রেজাল্ট পেতে সময় লেগেছে। তাই চূড়ান্ত ফলাফলে একটু দেরি হয়েছে। ফলাফল প্রস্তুত। তবে কবে ফলাফল প্রকাশ হবে, তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর বলতে পারবে।
স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশে এত দেরি কেন— জানতে চাইলে কুবি ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস বলেন, প্রায় দেড় থেকে দুই মাস আগে পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন কবে ফলাফল প্রকাশ হবে, এটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে বলতে পারবে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় শিক্ষকরা সঠিক সময়ে খাতা জমা দিতে পারেন না। তখন বিষয়টি তাদের জানানো হয়। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় একটা সংকট চলছে, শিক্ষকরাও ক্যাম্পাসে কম আসেন, তাই এখন চাইলেও আমরা তাদের বলতে পারছি না। রেগুলার রেজাল্টগুলোও দেরিতে জমা দেওয়া হচ্ছে। ফলে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের সঠিক সময় বিলম্বিত হচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ফলাফল প্রকাশে কেন দেরি হচ্ছে, এটা তো আমি বলতে পারব না। বিভাগের রেজাল্ট কোন পর্যায়ে আছে, খাতা দেখা হয়েছে কি না, রেজাল্ট তৈরি করা হয়েছে কি না— এগুলো না জেনে আমি কিছু বলতে পারব না। যে রেজাল্টগুলো আমাদের কাছে আসছে, সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রুত আমরা অনুমোদন দিয়ে দিচ্ছি। রেজাল্ট জমা না পড়লে আমাদের করার কিছু নেই।’
উপউপচার্য আরও বলেন, ‘সঠিক সময়ে ফলাফল না দিতে পারা সব শিক্ষার্থীর জন্যই ক্ষতিকর। এক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, এটা তো কারও কাছে কাম্য না।’
সারাবাংলা/টিআর
কুবি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার ফল স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা