Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পতেঙ্গায় খুনে গ্রেফতার ৭, কিশোর গ্যাংয়ের কাণ্ড– বলছে পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ জুন ২০২৪ ১৮:৩৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের পতেঙ্গার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া তরুণকে খুনের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা উঠতি বয়সের তরুণ। তারা পাড়া-মহল্লার অপরাধী চক্র হিসেবে পরিচিত কথিত ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ সদস্য। বেপরোয়াভাবে বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি, বাইক চালানোর সময় বিকট শব্দ তৈরি করা হিরোইজম প্রদর্শন, মারামারিসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে তারা জড়িত।

সোমবার (১০ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাতজনকে গ্রেফতারসহ এ মামলার অগ্রগতি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দেন।

গ্রেফতার সাতজন হলেন— জাহিদুল ইসলাম (২২), মোবারক হোসেন (২৩), ইকবাল হোসেন ইমন (২২), শাহরিয়ার আল আহমেদ (২০), তাহরিয়ার আহমেদ বাঁধন (২০), মারুফ চৌধুরী (২১) ও জুবায়ের বাশার (৩৪)।

এর আগে, রোববার (৯ জুন) ভোরে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন টানেলের প্রবেশমুখে গোলচত্বরে মোটরসাইকেলের উচ্চ শব্দ নিয়ে তরুণদের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি লাগে। মারামারির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে খুন হন মনিরুজ্জামান রাফি (২৫)। নিহত রাফি চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরের বাকের আলী ফকিরের টেক এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় রায়হান নামে রাফির এক বন্ধুও গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপ-পুলিশ কমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘রোববার ভোর চারটার পরে আমাদের কাছে খবর আসে, মোটর সাইকেলের সাইলেন্সরের বিকট শব্দ নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একগ্রুপে চার থেকে পাঁচজন, অন্যগ্রুপে ১৪ থেকে ১৫ জন ছিল।’

‘তদন্তে জানা গেছে, ১৫ জনের গ্রুপটি চারজনের গ্রুপের ওপর হামলা করে। হামলার একপর্যায়ে রাফিকে অপর পক্ষের লোকজন ছুরিকাঘাত করে ও তার বন্ধু রায়হানকে মারধর করে। গুরতর আহত অবস্থায় দুইজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাফিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছুরিকাঘাত যে করেছে, সেই মোবাকর হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।’

খুনের ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি কিশোর গ্যাংয়ের হত্যাকাণ্ড ধরে নেওয়া যায়। কারণ যারা এ কাজ করেছে তারা প্রায়ই অনেকেই সদ্য কৈশোর পার করা উঠতি বয়সের তরুণ। এরা গভীর রাতে কিংবা ভোরে মোটর সাইকেল নিয়ে বিভিন্নস্থানে ঘোরাঘুরি করে। তারা বীচে গিয়ে মারামারি করবে, এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়।’

হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মোটর সাইকেলের সাইলেন্সরের উচ্চশব্দ নিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত হয়। এর জেরে খুন। এটি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটানো হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় আমাদের পাড়া-মহল্লায় যেসব কিশোর গ্যাংয়ের ঘটনা ঘটে, সেগুলোর অনুরূপ। এটা আমি সামাজিক অবক্ষয় বলব। কাউকে সহ্য না করা, সম্মান না করা বা ধৈর্য্যর সঙ্গে কোনো কিছু মোকাবেলা না করা- এরকম অশোভন পরিবেশ আমাদের এখানে তৈরি হয়েছে।’

গ্রেফতার আসামিরা কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ডিসিপি-বন্দর শাকিলা সোলতানা।

পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবিরুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, রাফি ও তার তিন বন্ধু রাতে কোরবানির পশুর হাটে গিয়েছিলেন। সেখানে গরু দেখা শেষে মোটর সাইকেল করে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। এসময় তাদের মোটর সাইকেলের উচ্চশব্দ নিয়ে মোবারকসহ স্থানীয় কয়েকজন ছেলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডতা হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের ঝগড়া থামিয়ে দুই গ্রুপকে দু’দিকে পাঠিয়ে দেয়।

‘রাফি ও তার বন্ধুরা কিছুক্ষণ পতেঙ্গা সী বীচ এলাকায় ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে মোবারক তার গ্রুপ নিয়ে এসে আবার তাদের ওপর হামলা করে। এসময় মোবারক তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে রাফিকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। খবর পেয়েই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রথমে চারজন ও তাদের দেওয়া তথ্যমতে মোবারকসহ বাকি তিনজনকে কোতোয়ালী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে,’ — বলেন ওসি কবিরুল ইসলাম।

বোনাসের টাকা মায়ের হাতে দেওয়া হলো না রাফির

রাফি চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরের বাকের আলী ফকিরের টেক এলাকায় নানা বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। নগরীর সিইপিজেডে ইয়ংওয়ানের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তিনি। সামনের কোরবানির ঈদে গরু কিনতে মামাদের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন রাফি। এ জন্য তার মাকে বেতন ও বোনাস পেলে টাকা দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু বোনাসের টাকা মায়ের হাতে আর তুলে দিতে পারেননি রাফি।

সোমবার (১০ জুন) দুপুরে নগরীর নিমতলা এলাকার বন্দর স্টেডিয়াম সংলগ্ন সিএমপির উপ কমিশনার (বন্দর) কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলছিলেন ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া রাফির মা জান্নাতুল ফেরদৌস।

স্বামী পরিত্যক্তা জান্নাতুলের একমাত্র সন্তান রাফি। তাকে হারিয়ে দিশেহারা মা, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার আহাজারি করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘বিয়ের একবছর পর স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর আমি মায়ের বাড়িতে চলে আসি। সেখানেই আমার ছেলের জন্ম হয়। তাকে নিয়েই আমি আমার মায়ের বাড়িতে থাকতাম। আমার মা আমাকে আর ছেলেকে লালন-পালন করেছে। আমার ছেলের দিকে তাকিয়ে আমি আর বিয়ে করিনি। আমি বিয়ে করলে তাকে কে দেখবে। বিয়ের জন্য অনেক প্রস্তাব এসেছিল।’

জান্নাতুল বলেন, ‘আমার ছেলে খুব সহজ সরল। কোনো আবদার থাকলে আমার কাছেই করত। সর্বশেষ শনিবার রাত দুইটার দিকে আমি আমার ছেলেকে কল দিই। সে কল ধরে বলে আম্মু আমি চলে আসব, তুমি টেনশন করো না। সে আমাকে বাড়ির গেট বন্ধ করে দিয়ে ঘুমিয়ে যেতে বলে।’

‘ভোর হয়ে গেলেও যখন রাফি আসছে না, তখন আমি অনবরত তাকে কল দিতে থাকি। সে যখন কল ধরছিল না, তখন আমার ভয় হয়। আমি আমার মাকে তাকে কল দিতে বলি। আমার মা কল দিলে রাফির মোবাইল অন্য একজন ধরে বলে রাফি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। আমরা যাতে তাড়াতাড়ি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। আমার ছোট ভাইসহ তাড়াতাড়ি মেডিকেলে গিয়ে শুনি সে মারা গেছে।’

ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চাই। আমার তো আর কেউ নেই। আমি এ ছেলের আশায় বেঁচে ছিলাম। আমার ছেলে চাকরি করে। সে বলেছিল- আম্মু আমি তোমাকে টাকা দেব বেতন-বোনাস পেলে। নানুকে আর মামাকে টাকা দিও। আমার কিছু ধারকর্জ ছিল। সেগুলোও পরিশোধ করার জন্য সে টাকা দেবে বলেছিল। আমার ছেলেকে ওরা কীভাবে মেরে ফেলল ! আমি বিচার চাই।’

সারাবাংলা/আইসি/একে

টপ নিউজ রাফি হত্যাকাণ্ড


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর