Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লজিস্টিক খাতে ভ্যাট কমাতে হবে

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১০ জুন ২০২৪ ২১:০১

ঢাকা: দেশের ই-কমার্স খাতের উন্নয়নে লজিস্টিক খাতে ভ্যাট কমানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পরিচালক ও ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিপ্লব ঘোষ রাহুল।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের ক্ষেত্রে এখনো ই-কমার্স নামে কোনো ক্যাটাগরি নেই। ফলে ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তাদের লাইসেন্স পেতে বেগ পোহাতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সে ই-কমার্সকে ক্যাটাগরি হিসেবে যুক্ত করতে সোচ্চার ভূমিকা নিতে হবে। এ ছাড়া সেবা হিসেবে লজিস্টিক খাতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ রয়েছে। এই ভ্যাট কোনোভাবেই ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।

সারাবাংলার সঙ্গে একান্ত আলাপে ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী (সিইও) বিপ্লব ঘোষ রাহুল বলেন, ‘ই-কমার্সের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার লজিস্টিক। এটি সেবা খাত। কিন্তু এই খাতে এখন ভ্যাট ১৫ শতাংশ। অথচ অন্যান্য সব সেবা খাতের ক্ষেত্রে ভ্যাট ৫ শতাংশ। যেহেতু লজিস্টিকও সেবা, তাই লজিস্টিক খাতে ভ্যাট ৫ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। এটি নিয়ে বিভিন্ন সময় আমরা দাবি করে আসছি। কুরিয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকেও বলা হয়েছে।’

লজিস্টিক খাতের করের ওপর ই-কমার্সের পণ্যের ডেলিভারি চার্জ নির্ভর করে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘নীতি নির্ধারকদের কাছে আমাদের দাবি ‍উপস্থাপন করতে হবে। কিন্তু সেই চাওয়াটিই ভালো করে হয়নি। এখানে একটি বড় দূরত্ব রয়েছে। আমাদের ১০ শতাংশ কর ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। তাহলে আমাকে কিন্তু ২৫ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। সেই খরচ যুক্ত করতে হয় শিপিং চার্জে।’

বিপ্লব মনে করেন, কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে একেকটি ডেলিভারি চার্জ ঢাকার ভেতরে ১০০ টাকা ও ঢাকার বাইরে দুই থেকে আড়াই শ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ পরিমাণ ডেলিভারি চার্জ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ ক্রেতারা এত ডেলিভারি চার্জ দিয়ে পণ্য কিনবেন না।

বিপ্লব বলেন, ‘আমরা বেসিস থেকে এটি নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। লজিস্টিকে কীভাবে ভ্যাট কমানো যায়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। অথবা রিভ্যাট দিতে হবে। এই জায়গায় আমাদের আরও কাজ করার রয়েছে। সবাইকে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’

লজিস্টিক খাতে লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান ৩২টি হলেও দেশে ছয় শতাধিক কুরিয়ার কোম্পানি কাজ করছে জানিয়ে বিপ্লব বলেন, ‘ভ্যাট দেয় কে? আমাদের তিন বছর পরপর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। তখন আমার প্রতিষ্ঠানে পরিপূর্ণ অডিট রিপোর্ট জমা দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করে। বাকিগুলো কিন্তু অডিট করে না। তাদের ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়েও এত টেনশনও নেই। আমি ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে টেনশনে আছি, কারণ আমাকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘আমি কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বসেছি। ট্র্যাডিশনাল লজিস্টিকস আর থাকবে না। আমাদের স্মার্ট লজিস্টিকসে যেতে হবে। বেসিস থেকে উদ্যোগ নিয়ে সব পক্ষকে নিয়ে আমরা সরকারে সঙ্গে বসতে চাই। আমাদের দাবি তুলে ধরতে চাই।’

বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বেসিসের এই পরিচালক বলেন, ‘আইসিটি খাতের কর অব্যাহতি নিয়ে আমরা সবাই টেনশনে ছিলাম। আমরা আরও তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি পেয়েছি। এটি শুধু বেসিস নয়, সবকটি সংগঠনের বড় একটি দাবি ছিল। তবে আমাদের অনেকগুলো উপখাতের মধ্যে কিছু উপখাতকে কর অব্যাহতির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। ওয়েব হোস্টিংস সেবাতেও যেমন কর অব্যাহতি রাখা হয়নি। আমরা এই খাতেও কর অব্যাহতির দাবি জানিয়ে আসছিলাম।’

ই-কমার্স নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক মনে হয় ই-কমার্স খাতকে। এই খাত নিয়ে কোনো ধরনের কথাবার্তা হয়নি। বেসিস থেকে গত কয়েক মাস ধরে আমরা কর অব্যাহতির জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের বলে আসছিলাম। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে যে ভয়টি দেখি, ই-কমার্স নিয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ই-কমার্স অনেক বড় একটি খাত, দুই হাজার ৭০০’র বেশি সদস্য ই-কমার্সে। কিন্তু ই-কমার্স নামে বিজনেসের ক্যাটাগরিই নেই। ট্রেড লাইসেন্স করতে যাবেন, ই-কমার্স নামে কোনো ক্যাটাগরি নেই। এটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

কুরিয়ার খাত নিয়ে কাজ করা এই তরুণ উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘ই-কমার্সকে বিজনেজ ক্যাটাগরি হিসেবে যুক্ত করার কথা দুই-তিন বছর ধরে বলা হচ্ছে। তারপরও প্রক্রিয়াজনিত কিছু সমস্যা আছে। এখন অনলাইনে ব্যবসা করতে গেলে ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) লাগে। ট্রেড লাইসেন্স করতে গেলে বলে, ডিবিআইডি নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানেও জটিলতা। ১০০ জন আবেদন করলে ৮৭ জনের আবেদন বাতিল হয়। ফেইলিওর রেট ৮৭ শতাংশ। কারণ তাদের ডক্যুমেন্টশেন নেই, কাগজপত্র ঠিক নেই। এটি আরজেএসসি (যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর) দেখভাল করে। তাদের ঠিকমতো গাইড করা হয়নি। এটা নিয়েও আমরা বেসিস এখন কাজ করছি। আমাদের এ ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। ই-কমার্স ও কুরিয়ার খাতকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে সমস্যাগুলো আমাদের সরকারের কাছে তুলে ধরা উচিত।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ই-কমার্স কুরিয়ার সেবা বাজেট বাজেট ২০২৪-২৫ বিপ্লব ঘোষ রাহুল বেসিস লজিস্টিক খাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর