Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪ মেয়ে, তাই সিঁধ কেটে ছেলে শিশু চুরি!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ জুন ২০২৪ ০১:১৯

শিশু চুরি করতে সিঁধ কাটা হয় ঘরে। ছবি: সারাবাংলা

কিশোরগঞ্জ: তিন সন্তানের তিনটিই মেয়ে। আগের দিন চতুর্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন স্ত্রী। সেটিও মেয়ে। চার মেয়েও একটি ছেলে সন্তানের ‘আকাঙ্ক্ষা’ পূরণ করতে পারেনি সেই দম্পতির। তাই তাই ছেলের ‘অভাব’ পূরণ করতে সিঁধ কেটে অন্য এক দম্পতির আড়াই মাস বয়সী ছেলে সন্তানকে চুরি করেন স্বামী!

শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। চুরির ১২ ঘণ্টার মধ্যেই চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ। শিশুটি চুরির সঙ্গে যুক্ত ওই স্বামী এবং তার শাশুড়িকে পুলিশ আটক করেছে।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের শাহবাগ গ্রামে। রোববার (৯ জুন) দিবাগত শেষ রাত থেকে সোমবার (১০ জুন) ভোরের দিকে আড়াই মাস বয়সী ওই শিশুটি চুরি হয়। পরে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শাহবাগ গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন ও নাজমিন দম্পতির আড়াই মাস বয়সী সন্তান জুনাইদকে ঘরের সিঁধ কেটে রোববার (৯ জুন) শেষ রাত তথা সোমবার ভোরের দিকে দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে যায়। সোমবার সকালে খবর পেয়ে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াইল থানা পুলিশ যৌথভাবে উদ্ধার অভিযানে নামে। বিকেল ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেল মিয়ার বাড়ি থেকে শিশুটিকে তারা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রুবেল ও তার শাশুড়ি সস্তুকে পুলিশ আটক করেছে।

শিশুটির মা নাজমিন জানান, শিশুটি পেটের অসুখে ভুগছিল। রোববার রাত দেড়টার দিকে শিশুটিকে খাইয়ে তাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পাশেই ঘুমিয়েছিলেন নাজমিনের মা। তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন কুমিল্লায় বোনের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ফজরের আজানের সময় ঘুম ভাঙলে আর নাজমিন সন্তানকে দেখতে পাননি। একপর্যায়ে ঘরে সিঁধ কাটা ও সামনের দরজাটি খোলা দেখতে পেলে বুঝতে পারেন, তার সন্তান চুরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

নাজমিনের কান্নাকাটি ও চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। মসজিদের মাইকে শিশুটির সন্ধান চেয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়। সকালে খবর দেওয়া হয় তাড়াইল থানায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ ও তাড়াইল থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উদ্ধার অভিযানে নামে। বিকেল ৪টার দিকে নীলগঞ্জ বেত্রাহাটি গ্রামের রুবেলের বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ নাজমিনের কাছে ফিরিয়ে দেয়।

পরে সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ তার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, রোববার রাত পৌনে ২টা থেকে সোমবার ভোর ৪টার মধ্যে শিশুটি চুরি হয়। শিশুটিকে হত্যা করার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তৃতীয় লিঙ্গের কেউ শিশুটিকে নিয়ে গেছে, এমন কোনো ইঙ্গিতও পায়নি পুলিশ। পরে নিঃসন্তান কিংবা ছেলে সন্তান না থাকা পরিবারগুলোর কেউ শিশুটিকে চুরি করে থাকতে পারে— এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে শুরু হয় তদন্ত কার্যক্রম।

পুলিশ সুপার বলেন, আশপাশে আমরা এ রকম পরিবার খুঁজতে শুরু করি যাদের ছেলে সন্তান নেই কিংবা নিঃসন্তান। একটি সূত্র থেকে পুলিশ জানতে পারে, জনৈক রুবেল-খাদিজা দম্পতির তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে, রোববারই খাদিজা চতুর্থ কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। পরে হাসপাতালে গিয়ে রুবেল-খাদিজা দম্পতির সঙ্গে একটি একটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান দেখা যায়। তারা জানান, রোববার সন্তান দুটি প্রসব হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, খাদিজার সঙ্গে খাতা ছেলে সন্তানটির আকার-অবয়ব একদিন বয়সী নবজাতকের বলে মনে হয়নি। সন্দেহ ঘনীভূত হলে পুলিশ তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্যদের কাছ থেকেও তথ্য নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তথ্য দেয়। সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ছেলে সন্তানটি প্রকৃত অর্থেই রুবেল-খাদিজা দম্পতির সন্তান নয়। বরং এটি সাজ্জাদ-নাজমিন দম্পতির চুরি যাওয়া সন্তান জুনাইদ।

পরে রুবেল ও তার শাশুড়ি শিশুটিকে চুরির কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে নেন। পরপর চারটি কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়া ও পুত্র সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় তারা শিশু জুনাইদকে চুরি করেছেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ। সাজ্জাদ-নাজমিন দম্পতি লিখিত অভিযোগ দিলে আটক রুবেল ও তার শাশুড়িকে এ মামলায় জড়িত হিসেবে দেখিয়ে মামলা রেকর্ড করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

সারাবাংলা/টিআর

কিশোরগঞ্জ টপ নিউজ শিশু উদ্ধার শিশু চুরি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর