প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমি-ঘর পেয়ে জীবন বদলে যাচ্ছে তাদের
১১ জুন ২০২৪ ২১:৩৩
লালমনিরহাট থেকে: দিনে এখন ১০০ থেকে ১২০ কাপ চা বিক্রি করেন মো. বাহার আলী। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের সবদল কুঠিরপাড়া গ্রামের বাহার আলী। এর আগে রিকশা চালাতেন তিনি। অসুস্থতার কারণে রিকশা চালিয়ে তার অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের তেমন সামর্থ্য ছিল না। তবে তিন বছর আগে থেকে তার জীবনে পরিবর্তন হতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ঘর পেয়েছেন তিনি। সেখানে খুলেছেন টং দোকান। আর তাতেই সংসারের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে তার।
লালমনিরহাটে বাহার আলীর মতো প্রায় ২০০ পরিবার এখন স্বচ্ছতায় দিন পার করছে। কিছুদিন আগেও যারা পরের জমিতে গৃহহীন ছিলেন তারা এখন নিজের একটি ঘর পেয়েছেন, একখণ্ড জমি পেয়েছেন, ছোট ফসলের ক্ষেত, সেলাই মেশিনে পরিবারের আয়ের চাকা ঘুরিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল সাড়ে ১১টায় লালমনিরহাট জেলার ৪ উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর হবে মোট ১ হাজার ২৮২টি। এরমধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮৭৫ টি, পাটগ্রাম ৯৯টি হাতিবান্ধা ১৬৬টি ও আদিতমারিতে ১৪২।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। লালমনিহাটের সঙ্গে আরও দুই জেলা ভোলা ও কক্সবাজারের আশ্রয়হীন প্রকল্পের ঘর উদ্বোধন হয়েছে।
ইমরান আলীর স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, ‘এখন মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় হয় দোকান থেকে। সংসারের সঙ্গে ছেলের পড়াশোনার খরচও চালাতে পারছেন তারা। দোকানে চা ছাড়াও বিস্কুট, চিপস, ঠান্ডা পানীয় বিক্রি হয়।’
আদিতমারী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন এসব মানুষদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার। অনেকেই সেলাই মেশিন কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সেলাই মেশিন পেয়েছেন।
এদিকে এই উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নে ৩৪ টা পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন। তবে সেখানে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। ইউএনও জানিয়েছেন, তাদের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি তাদের প্রত্যেকের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ লাগবে।
আদিতমারীর মতো স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প উঠে এসেছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িয়াতেও। ছিট মহল হিসেবে পরিচিত দশিয়ারছড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনেকেই কাজ খুঁজে পেয়েছেন। বাড়ির পুরুষদের অনেকেই শহরে রিক্সা চালিয়ে বাড়তি উপার্জন করছে।
এই প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন মর্জিনা বেগম। তিনি জানান, তার দুই ছেলে ও স্বামী ঢাকায় রিকশা চালান। তবে স্বামীর হাঁপানির সমস্যা। এই বয়সে ঘর ও জমি পেয়েছে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন তারা।
লালমনিরহাটের তিস্তা উপজেলায় ৬৫ টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন গৃহহীনরা। এর আগে পাশেই রেলের জমিতে উদ্বাস্তুর মত থাকতেন তারা। এখন নিজের ঘর পেয়ে শুরু করেছেন চাষাবাদ। তিস্তা নদীর সঙ্গে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে শাক সবজি, বাদাম চাষ, গরু-ছাগল পালন করে আয় বাড়িয়েছেন তারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সেক্রেটারি মো. রছু মিয়ে জানান, খুবই স্বচ্ছভাবে ঘর প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে সারা দেশে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে দেশের আরও ৭০টি উপজেলা সম্পূর্ণ গৃহহীন মুক্ত হবে। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই ঘর এবং দুই শতাংশ করে জমির দলিল হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
সারাবাংলা/ইউজে/একে
আশ্রয়ণ প্রকল্প জমিসহ ঘর প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর উপহার লালমনিরহাট শেখ হাসিনা