Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিমুলতাইড় চরে ঘরবাড়ি-স্থাপনা সব গিলে খাচ্ছে যমুনা

আমজাদ হোসেন মিন্টু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ জুন ২০২৪ ০৯:৫৯

নদী ভাঙনের মুখে সরিয়ে নিতে হয়েছে বগুড়ার সারিয়াকান্দির শিমুলতাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ছবি: সারাবাংলা

বগুড়া: এগিয়ে আসছে বর্ষাকাল। এখনো পুরোদমে বৃষ্টি শুরু হয়নি, উজানের ঢলও নামতে শুরু করেনি পুরোপুরি। তবু যমুনায় বাড়ছে পানি। সঙ্গে সঙ্গে যমুনা ভয়ংকরও হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির শিমুলতাইড় চরে এরই মধ্যে ভাঙনের শিকার হয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০ থেকে ১৫টি বসতবাড়ি।

চরের বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরেই সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের শিমুলতাইড় চরে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর তীরবর্তী অনেক এলাকাতেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা রয়েছে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় তারা ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।

বিজ্ঞাপন

কেবল চরের বাসিন্দারা নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডও (পাউবো) ভাঙনের তীব্রতা নিয়ে শঙ্কার কথাই জানিয়েছে। পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, যমুনার ভাঙন ওই চরের অস্তিত্বকেই হুমকিতে ফেলেছে।

কৃষক আলাউদ্দিন ৩৬ বছর আগে যমুনার এই চর শিমুলতাইড়ে বসত গড়েছিলেন। জমি ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘা। এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই যমুনার তাণ্ডব শুরু হওয়ায় তার পাঁচ বিঘা জমিই ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তার তিন সন্তানের মধ্যে দুজন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ও একজন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন। এখন ভাঙনের মুখে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় যাবেন, সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

আলাউদ্দিন বলেন, ‘এখনই যে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, তাতে আমার পাঁচ বিঘা জমিই যমুনার পেটে চলে যেতে পারে। অসহায় বোধ করছি। জমি গেলে সংসার চালাব কীভাবে? তিন ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচই বা আসবে কোথা থেকে? কোনো কূলকিনারা পাচ্ছি না। আপাতত ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছি, অন্তত জীবনটা যেন বাঁচে।’

বিজ্ঞাপন

কেবল আলাউদ্দিন নয়, যমুনার গ্রাস থেকে বাঁচতে শিমুলতাইড়ের নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন বসতঘর, মালামাল। গ্রামের অন্তত ১০টি পরিবার নদীর তীর থেকে বাড়ি ভেঙে গ্রামের ভেতরের দিকে সরিয়ে নিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।

শিমুলতাইড় চরে প্রায় আড়াই শ পরিবারের বসবাস জানিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বাদশা বলেন, গত বছর এখানকার প্রায় ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি সব নদীর বুকে বিলীন হয়েছে। এ বছরও ভাঙনের মুখে রয়েছে ১০ থেকে পরিবারের বসতঘরসহ স্থাপনা। শুধু তাই নয়, চরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশও এরই মধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বাদশা বলেন, শিমুলতাড়ই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ নদীতে ভেঙে গিয়েছিল। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত নিলামের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সব প্রক্রিয়া শেষ। এখন বিদ্যালয়টি অপসারণের কাজ চলছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, নদীর তীরে যেসব ঘরবাড়ি আছে, সেগুলো হারিয়ে যেতে পারে। অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। বাকিরাও ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে।

এলাকাবাসী আরও বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে তাদের এলাকায় যমুনা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে দিন দিন এর ভয়াবহতা বাড়ছে। শিমুলতাইড় চরে সড়ক-বিদ্যুৎ সংযোগ সবই থাকলেও নদীর ভাঙন তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। একই ইউনিয়নের মানিকদাইড় এলাকাতেও নদীতে ভাঙছে স্থাপনা। ইউপি চেয়ারম্যান বললেন, যমুনা কখন যে কী বিশাল এলাকা ভেঙে নিয়ে যায়, কেউ বলতে পারে না। শিমুলতাইড়ের প্রতিটি পরিবার তাই এখন আতঙ্কে রয়েছে।

পাশের কামালপুর ইউনিয়নও যমুনার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামান রাসেল বলেন, গত মৌসুমেও এই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছিল। এতে বহু পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ কারণে এবার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেশি কাজ করছে।

জানতে চাইলে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, ‘শিমুলতাইড় চরটি যমুনার ভেতরে। এ জন্য সেখানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। ভাঙনের কারণে পুরাতন এই চরটির অস্তিত্বই হুমকির মুখে।’

ঝুঁকি স্বীকার করলেও বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

সারাবাংলা/টিআর

নদী ভাঙন পাউবো বগুড়া যমুনায় বিলীন যমুনায় ভাঙন শিমুলতাইড় চর সারিয়াকান্দি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর