ঈদুল আজহা: লবণের সংকট নেই, কমেছে দামও
১২ জুন ২০২৪ ২২:১৫
ঢাকা: দেশে এ বছর লবণের বাম্পার ফলন ফলন হয়েছে। ঈদুল আজহায় কোরবানি করা পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে যে পরিমাণ লবণের চাহিদা রয়েছে, মজুত রয়েছে তার অন্তত ১৪ গুণ। গত বছরের চেয়ে লবণের দামও এবার কম। খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি লবণের দাম কম রয়েছে অন্তত ২ টাকা। সব মিলিয়ে এবার কোরবানিতে লবণ নিয়ে শঙ্কা নেই বলেই মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। বরং লবণের দাম কম থাকায় ব্যক্তি পর্যায়েও চামড়া সংরক্ষণের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেকর্ড ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা গত ৬৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছরের চেয়ে এ বছর লবণ উৎপাদন বেশি হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার টন। বর্তমানে লবণের মজুত ১৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৯ টন। এর মধ্যে লবণ মাঠে রয়েছে ১১ লাখ ১৪ হাজার ৪২৮ টন, মিলে তিন লাখ ৬৬ হাজার ৪১ টন। এ ছাড়াও সরবরাহ চ্যানেল ও বিক্রেতা পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী লবণ মজুত রয়েছে।
বিসিকের তথ্য আরও বলছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ায় ব্যবহৃত লবণের মূল্য কমেছে কেজিতে ২ টাকা। গত বছর গড় মূল্য ছিল কেজি প্রতি সাড়ে ১৯ টাকা, যা এ বছর সাড়ে ১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে শিল্প লবণ পরিশোধিত মিল পর্যায়ে ১৪ টাকা ৫০ পয়সা, ডিলার পর্যায়ে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১৯ টাকা ৫০ পয়সা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা এক কোটি সাত লাখ দুই হাজার ৩৯৪টি। আর কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বলছে, প্রতিটি বড় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ১০ থেকে ১২ কেজি, মাঝারি চামড়ায় সাত থেকে আট কেজি ও ছোট চামড়ায় পাঁচ থেকে ছয় কেজি লবণ লাগে। সে হিসাবে এ বছর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে লবণের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ টন।
লবণ মিল মালিকরাও বলছেন, কোরবানিতে সাধারণত এক থেকে এক লাখ ২৫ হাজার টন লবণের প্রয়োজন পড়ে। এবার কোরবানিতে লবণের চাহিদাও প্রায় একই রকম। গত বছরও লবণের চাহিদা একই রকম ধরা হয়েছিল। এসব তথ্যের সঙ্গে বিসিকের তথ্য মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, দেশে লবণের মজুত রয়েছে এই চাহিদার প্রায় ১৪ গুণ।
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মাইজবাড়ি গ্রামের মণিহারী দোকানদার বাবু সারাবাংলাকে বলেন, চামড়ায় দেওয়ার খোলা লবণ খুচড়ায় ১৭ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে ৭৪ কেজির বস্তার দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার লবণের দাম কিছুটা কম।
জানতে চাইলে লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এ বছর পর্যাপ্ত লবণ রয়েছে। ঈদুল আজহা ঘিরে লবণের কোনো সংকট নেই। চট্টগ্রামে মিল গেটে ১২ থেকে ১৩ টাকা কেজিতে লবণ বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে ৫০ কেজির লবণের বস্তা ৬৫০ টাকা। আর ৭৪ কেজির বস্তার দাম পড়ছে ৯৬২ টাকা। মিলিগেটে সবচেয়ে ভালো লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকা ও একেবারে নিম্ন মানের লবণ ১১ টাকা কেজি দরে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে নুরুল কবির বলেন, ‘কোরবানি এলেই লবণ নিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথা ব্যথা শুরু হয়। একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে আট থেকে ১০ কেজি লবণ লাগে। সে হিসাবে একটি চামড়ায় ১০০ টাকার মতো লবণ প্রয়োজন। অথচ প্রতিবছর কোরবানি এলেই লবণ নিয়ে তাদের অনেক কথা।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, এ বছর লবণের বাম্পার ফলন হয়েছে। বৃষ্টি কম থাকায় লবণের উৎপাদন ভালো। লবণের দাম এ বছর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজিতে লবণ পাওয় যাচ্ছে। গত বছর লবণের দাম ছিল কেজি প্রতি ১৯ টাকা। লবণ নিয়ে এবার চিন্তার কিছু নেই।
কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানও সারাবাংলাকে বলেন, লবণের দাম নাগালের মধ্যেই রয়েছে। লবণের দামও গত বছরের চেয়ে কিছু কম।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উপমহাব্যবস্থাপক (লবণ সেল প্রধান) সরোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে এ বছর লবণের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদার চেয়ে এবার উৎপাদন বেশি, মজুতও বেশি। দামও গত বছরের চেয়ে ২ টাকা কমেছে কেজিতে। এবার লবণের চাহিদা গত বছরের মতোই এক লাখ টন। তবে গত বছর লবণ লেগেছিল ৮৫ হাজার টন।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিসিক থেকে তিন স্তরের মনিটরিং টিম করা হয়েছে। লবণ নিয়ে কোথাও কোনো ফাঁক-ফোঁকর তৈরির সুযোগ নেই। কোরবানি সামনে রেখে লবণ নিয়ে সিন্ডিকেট হওয়ারও সুযোগ নেই।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
অপরিশোধিত লবণ ঈদুল আজহা কোরবানির পশু চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ বিসিক লবণ লবণের বাজার