হাটভর্তি গরু, দাম যাচাই করতে যাচ্ছেন ক্রেতারা
১৩ জুন ২০২৪ ০৭:৫৩
ঢাকা: ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র তিন দিন। ঈদ সামনে রেখে এরই মধ্যে রাজধানীর নির্ধারিত স্থানগুলোতে বসেছে পশুর হাট। এসব হাটে প্রচুর গরু উঠলেও বিক্রেতারা বলছেন, বেচাবিক্রি এখনো সে অর্থে শুরু হয়নি। ক্রেতারা হাটে এলেও দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। গরু কেনার চেয়ে দাম যাচাইয়েই তাদের আগ্রহ বেশি।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, বিক্রেতারা এত আগে গরু বিক্রিতে খুব একটা আগ্রহী নন। সে কারণে তারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি দাম চাইছেন। রাজধানীর কমলাপুর ও শাহজাহানপুর হাট ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতার কেনার ও বিক্রেতার বিক্রির আগ্রহ এখনো পুরোপুরি না থাকার কারণেই গরু বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে।
শাহজাহানপুরের কোরবানির পশুর হাট বসেছে রেলওয়ে কলোনি মৈত্রী সংঘের মাঠে। বুধবার (১২ জুন) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাট ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর গরুর উপস্থিতিতে হাট রীতিমতো জমজমাট। হাটে মানুষজনের আনাগোনাও কম নয়। তবে তাদের মধ্যে ক্রেতার সংখ্যা নগণ্য। হাটের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সর্বশেষ তিন দিনে এই হাট থেকে গরু বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫০টি।
বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় হাট ঘুরে দেখা যায়, গরুর তুলনায় ক্রেতার সংখ্যাই কম হাটে। এর মধ্যেও যারা আসছেন, দাম জিজ্ঞাসা করেই ফিরতি পথ ধরছেন। কেউ কেউ বিক্রেতার চাওয়া দামের তুলনায় দাম বলছেন অনেক কম। বিক্রেতাদের চাওয়া ও ক্রেতাদের বলা দামের পার্থক্য এতই বেশি যে সেই দূরত্ব ঘুচছে না, গরুও বিক্রি হচ্ছে না।
শাহাজাহানপুর রেলওয়ে কলোনী মৈত্রী সংঘের মাঠে হাটের হাসিলের টাকা তোলার দায়িত্বে ছিলেন মো. শাহরিয়ার তালুকদার। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, আমাদের হাটে প্রচুর গরু রয়েছে। তিন-চার দিন ধরেই বাজারে গুরু আসতে শুরু করেছে। আজ (গতকাল বুধবার) মূল হাটের ৮০ শতাংশ জায়গা কোরবানির পশুতে ভরে গেছে। এখন কেবল আশপাশের অলিগলি ও রাস্তা ফাঁকা আছে। আগামীকালের (আজ বৃহস্পতিবার) মধ্যে অলিগলিও গরুতে ভরে যাবে।
গরু বিক্রির পরিমাণ কেমন— জানতে চাইলে শাহরিয়ার বলেন, এখনো গরু বেচাকেনা শুরু হয়নি বলা চলে। ক্রেতারা এসে দাম-দর করে চলে যাচ্ছেন। রাজধানীতে সাধারণদ ঈদের দুই দিনস আগে থেকে বেচাকেনা জমজমাট হয়ে ওঠে। আশা করছি শুক্রবার থেকেই বিক্রি জমজমাট হয়ে উঠবে।
শাহরিয়ারের কাউন্টারে ১০ থেকে ১২ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ১৬টি গরু বিক্রি হয়েছে। আর হাটের মোট ১০টি কাউন্টার মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০টি গরু বিক্রি হয়ে থাকতে পারে বলে জানালেন তিনি।
শাহাজাহানপুরের এই পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, ছোট থেকে শুরু করে মাঝারি-বড় সব আকৃতির গরুর উপস্থিতিই রয়েছে হাটে। তবে ক্রেতাদের নজর মাঝারি আকৃতির গরুর দিকে। দাম হিসাব করলে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যেই গরু কিনতে চাইছেন ক্রেতারা। তবে হাটে কোনো গরুর দামই এই দামের মধ্যে চাইছেন না বিক্রেতারা। দেড় লাখ টাকার বেশিই দাম হাঁকা হচ্ছে সব গরুর।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা থেকে ১৬টি গরু নিয়ে শাজাহানপুর হাটে এসেছেন মো: ফজল। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, তিন দিন হলো আসছি। এখনো কোনো গরু বিক্রি হয়নি। ক্রেতারা এসে দাম জিজ্ঞাসা করে চলে যাচ্ছেন। দুয়েকজন দাম বলছেন। কিন্তু তারা এমন দামই বলছেন যে বিক্রি করা সম্ভব না। তারা মূলত এখন বাজার যাচাই করার জন্য আসছেন।
একই কথা বললেন জামালপুরের ইসলামপুর থেকে আসা মো. কবির সরকার। ১৭টি গরু নিয়ে ভালো দামের আশায় তিনি এসেছেন রাজধানীর হাটে। কবির সারাবাংলাকে বলেন, ১৭টি গরুর মধ্যে গত তিন দিনে একটি গরুও বিক্রি হয়নি। অন্যদের গরুও বিক্রি হচ্ছে না খুব একটা। আশা করছি শুক্রবার থেকে গরু বিক্রি শুরু হবে। কারণ রাজধানীতে সবসময়ই ঈদের দুয়েক দিন আগেই মানুষ কোরবানির গরু কিনে।
রাজধানীর মানিকনগর থেকে এই পশুর হাটে এসেছিলেন আমির হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বাজারে গরুর দাম কেমন তা যাচাই করতে এসেছি। কয়েকটি গরুর দাম জিজ্ঞাসা করলাম। যা বুঝলাম, দাম অনেক। গরুর ব্যাপারিরা এখন স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেক বেশি দাম চাচ্ছে। তবে দুয়েক দিন গেলে ওদেরও বিক্রির গরজ বাড়বে। আমাদেরও কেনার গরজ বাড়বে। তখন গরু কিনব।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
ঈদুল আজহা কোরবানির পশু কোরবানির পশুর হাট কোরবানির হাট পশুর হাট শাহজাহানপুর পশুর হাট