Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মূলধন সংকট: জয়পুরহাটে এবারও চামড়া কেনার প্রস্তুতি নেই

মো. শামীম কাদির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুন ২০২৪ ০৮:১৭

আড়ত প্রস্তুত থাকলেও ঈদে চামড়া কেনার মূলধন নেই বলে জানাচ্ছেন জয়পুরহাটের ব্যবসায়ীরা। সারাবাংলা ফাইল ছবি

জয়পুরহাট: ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া। এই অবস্থায় আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা, চামড়া কিনতে না পারলে সেগুলো চোরাকারবারির হাতে চলে যাবে। দেশের কোটি কোটি টাকার চামড়া পাচার হয়ে যাবে ভারতে। এখনই প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের দাবি চামড়া ব্যাবসায়ীদের।

প্রতি বছর ঈদুল আজহগায় জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে এ বছর জেলার চামড়ার আড়তগুলোতে নেই প্রস্তুতি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান বাজার ধসে এমনিতেই লোকসান, তার ওপর ট্যানারি মালিকদের প্রায় ৪০ কোটি টাকার বাকি দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন তাদের অনেকে। এ অবস্থায় চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে চামড়া মালিক সমিতি।

বিজ্ঞাপন

জয়পুরহাট শহরের আরাফাত নগর, আমতলী,পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবার নেই প্রস্তুতি। এসব আড়তের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকেরা গত কয়েক বছরের কোটি কোটি পাওনা টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। এ ছাড়া প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়েছে মূল ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও থাকে এখানে। সেইসঙ্গে চামড়ার প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা যেন উদ্যোগ নেন ও সেইসঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে লোন দেয়, এ বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টিও কামনা করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়ীদের কাছে কোটি কোটি টাকা বাকি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সারাবাংলা ফাইল ছবি

জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আড়তগুলো প্রস্তুত আছে। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের যে পাওনা, তা তো দিচ্ছে না। ব্যাংকের লোনও পরিশোধ করতে পারছি না। ফলে ব্যাংকও আর নতুন লোন দিচ্ছে না। তাহলে চামড়া কিনব কী দিয়ে?

এ অবস্থায় আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন গোলজার। তিনি বলেন, ট্যানারি মালিকরা সবসময় সিন্ডিকেট দিয়ে চামড়া কেনেন এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অল্প করে টাকা দেন। এভাবে ব্যবসা চালানো যায় না।

পাঁচবিবি উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটনসহ কয়েকজন বললেন, চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাচার রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্প লাভের মুখ দেখবে।

কোরবানির আগে পুঁজি সরবরাহ করে চামড়া শিল্পকে সচল রাখবে ট্যানারি মালিকরা— এমন আশাবাদ জানিয়ে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি চামড়া শিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচার রোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।

এদিকে চামড়া পাচারের আশঙ্কা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাহিদ নেওয়াজ বলেন, চামড়া পাচার রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকার যেসব জায়গা তাদের পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, সেই জায়গাগুলো সবসময় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়।

সারাবাংলা/টিআর

কোরবানির পশুর চামড়া চামড়া জয়পুরহাট ট্যানারি ব্যবসা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর