বাড়তি দামে জমছে না দা-ছুরি, বটি-চাপাতির বেচাকেনা
১৪ জুন ২০২৪ ১১:১৫
ঢাকা: ঈদুল আজহা মানেই পশু কোরবানি। আর তার জন্য প্রয়োজন দা-ছুরি ও বটি-চাপাতি। বছরের এই সময়টাকেই এসব পণ্যের জন্য মনে করা হয় ভরা মৌসুম। এ বছরও রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এসব দা-ছুরি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামাররা। দা-ছুরি-চাকু-চাপাতিসহ পশু কোরবানি ও মাংস কাটার নানা সরঞ্জাম বিক্রি করছেন তারা। পাশাপাশি শান দেওয়া হচ্ছে নতুন ও পুরনো পণ্যে। এ ছাড়া কাঠের গুঁড়িও বিক্রি চলছে সমানতালে। তবে বিক্রেতাদের দাবি, গত বছরের তুলনায় বেচাবিক্রি কম।
এর মধ্যেও কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় এসব সরঞ্জামের দাম নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরে এসব পণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। অন্যদিকে কামারারা বলছেন, এসব পণ্য প্রস্তুতের প্রধান কাঁচামাল কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে এ বছর। বেড়েছে লোহার দামও। চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল না পাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, খরচও বেশি হচ্ছে। সে কারণেই তাদের খরচও হচ্ছে বেশি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর নিউমার্কেট, শ্যামলী ও আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন কামারের দোকান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, ভরা মৌসুম হলেও এ বছর কোরবানি ও মাংস কাটার সরঞ্জামের বিক্রি তুলনামূলকভাবে কম। নিউমার্কেট, শ্যামলী ও আগারগাঁও— তিন এলাকাতেই দা-ছুরি-চাপাতি-খাইট্টা বিক্রেতার দাবি, আগের মতো সাড়া নেই ক্রেতাদের। ঈদ কাছে এলেও বিক্রি তেমন একটা বাড়েনি।
কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বছর ঈদ ঘিরে পশু কোরবানির ছুরি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৩০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। পশুর চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত ছুরি একেকটি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। গত বছর এগুলোর দাম ছিল ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। অন্য চাকু আকারভেদে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।
অন্যদিকে ভালো মানের বটি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায়, যেগুলো গত বছর ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ওজন অনুযায়ী প্রতি পিস চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এ ছাড়া চাইনিজ চাপাতি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
নিউমার্কেটের দা-বটি ও ছুরি-চাকু বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার সব দা-বটি ও চাপাতিসহ সব ধরনের পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। লোহার দাম বেড়েছে, তাই যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে। তবে বেচাকেনা এখনো সেভাবে বাড়েনি।’
হাজারিবাগ থেকে এই মার্কেটে দা-বটি কিনতে এসেছিলেন জয়নব বেগম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘দা-বটির দাম বেশি চাচ্ছে। একটা বটির দাম চাইছে ৭৫০ টাকা। গতবারের চেয়ে এবার দাম অনেক বেশি। এত দাম হলে কিনব কীভাবে?’
একই বাজারের বিক্রেতা আবদুল কাদের বলেন, সবকিছুর দামই তো বেড়েছে। একই রকমভাবে আমাদের জিনিসপত্রের দামও কিছুটা বেড়েছে। সেটা তো আমরা ইচ্ছা করে বাড়াইনি। এগুলো তৈরিতে খরচ বেড়েছে। তাই দা-বটি-চাকু ছুরির দামও বাধ্য হয়েই বাড়াতে হয়েছে।
দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই পড়েছে বিক্রির ওপর। আগারগাঁওয়ের বিল্লাল হোসেন নামের এক কামার যেমন বললেন, ‘এবার বিক্রি কম। দাম বাড়ায় বিক্রি কম হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু দাম না বাড়ালে তো আমাদের লস দিতে হবে।’
আগারগাঁওয বিএনপি বাজারে চাপাতি কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শফিক মিয়া। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ছোট একটা ছুরি দাম চাচ্ছে ৪০০ টাকা, যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ভেবেছিলাম দুটো ছুরি কিনব। এখন ভাবছি একটাই কিনে নিয়ে যাই। ওইটা দিয়েই কাজ চালাব।’
এদিকে কুরবানির পশুর হাড়-মাথা কাটতে গাছের গুঁড়ি তথা খাইট্টা ব্যবহার করতে হয়। মাংস কাটাকাটি করা ও রাখার জন্য পাটি তথা চাটাই ব্যবহার করে থাকেন সবাই। এ ধরনের গাছের গুঁড়ি ও পাটির বিক্রিও বেড়েছে। ছোট আকারের গাছের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। মাঝারি আকারের গুঁড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ও বড় আকারের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া চাটাই আকার ও মানভেদে প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ২০০ টাকায়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর