সাধ ও সাধ্যের টানাপোড়েনে জমে উঠেছে শাহজাহানপুরের হাট
১৪ জুন ২০২৪ ২৩:১৬
ঢাকা: শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন জমে উঠছে রাজধানীর শাহজাহানপুর কলোনির কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতার ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নাই। তবে বেচাবিক্রি আশানুরূপ নয় বলে জানালেন বিক্রেতারা। এদিকে সাধ্যের সঙ্গে সাধ না মেলায় হতাশ ক্রেতারা।
শুক্রবার (১৪ জুন) খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন এই হাট ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেল। বিক্রেতা ও হাসিলঘরে কথা বলে জানা গেল গতকাল থেকে হাট শুরু হলেও আজ বিকেল থেকে কেনাকাটা শুরু হয়েছে এই হাটে।
তবে প্রতিবারের মতোই ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে পশুর দাম নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। বিক্রেতারা বলছেন, পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় নির্ধারিত দামের কমে পশু বিক্রি করলে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। আর অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, অতিরিক্ত দামের জন্য পছন্দের পশু কিনতে পারছেন না তারা।
হাট ঘুরে দেখা গেল দেশের নানা প্রান্ত থেকে খামারিরা দেশি গরু নিয়ে এসেছেন। এক লাখ বিশ থেকে আড়াই লাখ পর্যন্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। গত বছরের তুলনায় ১০ থেকে ব২০ হাজার টাকা দাম বেশির বিষয়টি স্বীকারও করে নিলেন তারা। বলছেন, পশুখাদ্যের দাম রীতিমত দুইগুণ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়েছেন তারা। গরু প্রতি ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভের আশা করছেন। তা না হলে কোরবানির হাটে বিক্রি না করে পরে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার কথাও বলেন কেউ কেউ।
জামালপুরের ইসলামপুরের সুন্দরপুর থেকে ৭টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন দুই ভাই মো. জিয়াউল ও মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন তোতা। জানা গেল আড়াই মাস আগে ১০ লাখ টাকায় গরু সাতটি কেনেন তারা। ট্রেনে আনতে খরচ হয়েছে গরুপ্রতি ৬০০ টাকা। দুই ভাই, জিয়াউল হকের ছেলে ছাড়াও সঙ্গে এনেছেন আরও দুজন। প্রতিদিন পাঁচজনের খাওয়া খরচ ৩০০ টাকা করে দেড় হাজার টাকা। এখানেই ত্রিপল টানিয়ে ঘুমান তারা। এক লাখ থেকে দেড় লাখের মধ্যে একেকটি গরুর দাম নির্ধারণ করেছেন। গরু প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হলেই ছেড়ে দেবেন বলে জানালেন তারা।
জামালপুরেরই আরেক উপজেলা থেকে তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন মো. মজিবুর রহমান। এগুলোর দাম ক্রমান্বয়ে এক লাখ ১০ হাজার, এক লাখ ২০ হাজার ও এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। জানালেন, গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। কারণ হিসেবে বললেন, পশুখাদ্যের অতিরিক্ত দাম।
ঢাকার পাশের কেরাণগঞ্জের হজরতপুর থেকে পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন সাইদ। খামারে আরও দুটি গরু থাকলেও আনেননি। মাঝারি আকারের দেশি প্রজাতির গরুগুলোর দাম এক লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা। জানালেন পাঁচটি গরু আনতে তার খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। তারা পাঁচজন এসেছেন। তার খরচ দশ হাজার টাকা।
সাইদ বলেন, ‘বাপ-দাদার আমলের ব্যবসা তাই চাকরির পাশাপাশি চালায়ে যাচ্ছি। লসে বিক্রি করতে পারব না। বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে যাব। ৯০০ টাকার পশুখাদ্যের দাম এখন ১৮০০ টাকা। আমরা তো ইচ্ছা করে দাম রাখতেছি না। চালাতে না পারলে ব্যবসাই ছেড়ে দেব।’
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার বেলতলা থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ১৪টি গরু এনেছেন দুই ভাই শফিউদ্দিন ও মফিজুল। শফিউদ্দিন এনেছেন চারট গরু আর মফিজুলের গরু ১০ টি। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছে দুটো গরু। একটি এক লাখ ২৭ হাজার টাকায় আর অন্যটি এক লাখ ৯৭ হাজার টাকায়। বর্তমানে তাদের কাছে থাকা মাঝারি আকারের গরুগুলোর দাম সর্বনিম্ন দেড় লাখ টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা। এর মধ্যে আড়াই লাখের দুটি গরু তারা জোড়া বিক্রি করতে চান।
শফিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার আসছি। এর মধ্যে দুটো গরু বিক্রি হয়েছে। আজ (শুক্রবার) বিকেল থেকে কেনাবেচা জমে উঠেছে। আশা করছি একটা গরুও ফেরত নেওয়া লাগবে না।’
এদিকে প্রতিবারের মতোই গরুর দাম নিয়ে নাখোশ ক্রেতারা। তারা বলছেন, যে টাকার বাজেট নিয়ে আসতেছি সেই টাকার মধ্যে মনের মতো গরু পাচ্ছি না।
বাড়ির কাছের শাহজাহানপুরের এই হাট থেকেই গরু কেনেন বাসাবোর বাসিন্দা মো. রকিবুল ইসলাম। এক লাখ ২০ হাজার টাকা বাজেটেও মনের মতো গরু পাচ্ছেন না। জানালেন, বাড়িতে বাচ্চা-কাচ্চারা অপেক্ষা করছে গরু নিয়ে যাওয়ার জন্য। এদিকে গরুর দাম কমাচ্ছেই না বিক্রেতারা। কোরবানির গরুর দাম গতবারের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি বলে জানালেন তিনি।
এরই মধ্যে নজর কাড়ে ছোট্ট একটি বাছুর আকৃতির গরু। ছোট হলেও এটি বাছুর নয়, পূর্ণ বয়স্ক গরু। যেতে যেতে রেললাইনের পাশের ঘাস খেতে ব্যস্ত হয়ে যায় গরুটি। বাসাবোর সজিব ও তার বন্ধুরা গরুটিকে কিছুতেই সেই ঘাস থেকে টেনে নিতে পারছে না। জানা গেল এত ছোট হলেও গরুটির দাম ৫৫ হাজার টাকা।
সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিললে অনেকেই পছন্দের গরুটি কিনে নিলেও পুরো হাট ঘুরেও একটিও গরু পছন্দ হয়নি ছয় বছরের নার্সারি পড়ুয়া ওয়াফি হাসান মজুমদারের। আজ কী তাহলে গরু না কিনেই ফিরে যাবে জিজ্ঞাসা করলে ওয়াফি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেও তার অভিভাবকরা জানালেন, দাম বেশি হলেও খুঁজতেছেন। আজ ছুটির দিনেই কোরবানির গরু কিনে ফেলার ইচ্ছা তাদের। কারণ পরে দাম নাও কমতে পারে।
সারাবাংলা/আরএফ/একে