Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাটে ‘অতিরিক্ত’ দাম, চুয়াডাঙ্গায় বিক্রি হচ্ছে না কোরবানির পশু

রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২৪ ০৮:১৯

চুয়াডাঙ্গা: ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দু’দিন। ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় চুয়াডাঙ্গা জেলার পশুর হাটগুলো মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি হাটে যথেষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমও দেখা যাচ্ছে। তবে বিক্রির জন্য পশু আনা হলেও সেগুলো সব বিক্রি হচ্ছে না। ‘অতিরিক্ত দাম’ চাওয়ার কারণে আর্থিক সংকটে থাকা ক্রেতারা পশু কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

এছাড়া অসহ্য তাপমাত্রা ও ভ্যাপসা গরমে হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকছে অনেক ক্রেতা। তারা ছোট ছোট গ্রাম্য খামারিদের কাছ থেকে তাদের পছন্দের পশু কিনতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। শহরের পথে পথে বিক্রি হচ্ছে খাসি-ছাগল। হাটের বদলে সেখান থেকেই দরদাম করে পশু কিনছেন অনেকে।

বিজ্ঞাপন

চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পশুহাট দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী, জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী, আলমডাঙ্গা উপজেলার পৌর পশুহাট (এটি আয়তনের দিক থেকে ঢাকার গাবতলীর পশুহাটের পরের স্থানে) ও সদর উপজেলার ভুলটিয়া পশুর হাটে বিক্রির জন্য গরু, ছাগল, মোষ ও ভেড়া পালনকারীরা সেগুলো নিয়ে গেলেও অতিরিক্ত দাম চাওয়ায় অনেক পশু বিক্রি হচ্ছে না।

সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন গরু মোটাতাজাকরণ খামারিরা। মোটা গরুর চাহিদা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ক্রেতারা। সে কারণে এবার অধিক লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে ওই সব খামারিদের। এছাড়া পশু বিক্রেতারা খেয়াল-খুশি মতো তাদের পালিত পশুর দাম চাওয়ায় ক্রেতারা বিরক্ত হয়ে পশু না কিনে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন। ক্রেতারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে বেহিসেবি খরচ করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো দাম চাওয়া হচ্ছে।


হাট ঘুরে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা ট্রাক বোঝায় করে পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তীব্র গরমের মধ্যে বিক্রেতারা গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি করছেন। স্থানীয় খামারি ও বিক্রেতারা অল্প লাভে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। দেশি মাঝারি গড়নের গরুগুলোর চাহিদা বেশি দেখা গেছে। গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি।

বিজ্ঞাপন

ক্রেতারা বলছেন, তাদের বাজেট ছাড়িয়ে ১০-২০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে গরু কিনতে হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতারা বলছে, গরু লালনপালন করার খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেশি চাওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রহিম মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিনি ৮টি গরু কিনেছের। ৫টি গরু ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়েছে, সীমিত লাভে বাকি গরুগুলোও বিক্রি করে দেবো।’

গরু ব্যবসায়ী আলী ব্যাপারী জানান, ৫টি গরু নিয়ে সকাল থেকে তিনি শিয়ালমারী হাটে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সুবিধামতো দাম না পাওয়ার কারণে একটি গরুও তিনি বিক্রি করতে পারেনি। বড় ব্যাপারীরা গরু কিনে নিয়ে আগেই ঢাকায় চলে গেছে, যার কারণে হাটে বড় ক্রেতা কিছুটা কম।

পাইকারী ক্রেতা ইউনুস ব্যাপারী বলেন, ‘দুইটি ট্রাকে আনুমানিক ২০টি গরু কিনে ঢাকাতে নিয়ে যাবো। ১২টি গরু কিনতে পেরেছি। আর ৮টি গরু কেনার চেষ্টা করছি।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের মুসলিমপাড়ার বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সদস্য সাইফুল ইসলাম কনক জানান, এ প্রতিষ্ঠানে তারা ৪০টি গরু পালন করেছেন। এখন পর্যন্ত ১৫টি গরু বিক্রি করা গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়ায় শনিবার (১৫ জুন) সর্বশেষ হাট বসবে। সেখানে গরুগুলো বিক্রি না করতে পারলে তাদের ১০ লাখ টাকা লোকসান হবে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা গ্রামের চৌধুরী অ্যাগ্রো খামারের স্বত্ত্বাধিকারী রাকিব চৌধুরী জানান, তাদের খামারে ২৫০টি গরু কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে। এরইমধ্যে ১০০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি ১৫০টি গরু বিক্রির অপেক্ষায় আছে। এ গরুগুলো বিক্রি না হলে মোটা অংকের লোকসান হবে বলে তিনি জানান।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৯টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ হাজার ৯২৮টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৭১৪টি। এসব খামারে কোরবানি উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মোষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি এবং অন্যান্য ৭টি। এবার জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি। সে হিসাবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার ২৩টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

সারাবাংলা/এমও

অতিরিক্ত দাম কোরবানি কোরবানির পশু গরু চুয়াডাঙ্গা হাট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর