ঈদযাত্রা: আজও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
১৫ জুন ২০২৪ ১৩:২০
ঢাকা: এবার ঈদুল আজহার তিন দিন ছুটির আগের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় ঘরমুখো মানুষের মূল স্রোতটা মূলত বৃহস্পতিবারই (১৩ জুন) ছিল। গতকাল শুক্রবারও (১৪ জুন) বহু মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। তবে সেই সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় ছিল অনেকটাই কম। আজও ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। তবে তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি।
এদিকে, বাস ও লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো। বাড়তি নিচ্ছে লঞ্চগুলোও। তবে ট্রেনের বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া না গেলেও বিলম্বে ছাড়ার অভিযোগ রয়েছে।
শনিবার (১৫ জুন) ঢাকা রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের কোনো চাপ নেই। বেশিরভাগই কাছাকাছি পথের যাত্রীদের দেখা গেছে।
কথা হয় তারাকান্দি রুটের অগ্নিবিনা এক্সপ্রেসের যাত্রী নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া ভ্রমণ করতেই ছুটির একদিন বাদে পরিবার নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন। সাড়ে ১১ টায় ট্রেন ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও এখনো প্লাটফর্মে ট্রেন এসে পৌঁছায়নি। যথাসময়ে পৌঁছায়নি খুলনা রুটের নকশীকাঁথা এক্সপ্রেসও। যাত্রীরা জানিয়েছেন প্রায় প্রতিটা ট্রেনই দেরি করে পৌঁছেছে। তবে সকালে যেসব ট্রেন ছেড়ে গেছে তা অনেকটা যথা সময়েই ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নকশীকাঁথা এক্সপ্রেসের যাত্রী মাকসুদা মিলি সারাবাংলাকে বলেন, গণমাধ্যমে কাজ করার কারণে অন্য সব সেক্টরের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি ছুটি পান না। তিনি বলেন, আমার ছুটি মূলত রোববার (১৬ জুন) থেকে শুরু হবে, শনিবার (১৫ জুন) সাপ্তাহিক ছুটি পড়ে যাওয়ায় বাড়তি এক দিনের ছুটি কাটানোর সুযোগ মিলেছে। সেজন্য আজই খুলনা যাবেন বলে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসলেও ট্রেন পৌঁছায়নি।
ঢাকা রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কমলাপুর স্টেশন থেকে ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। বরং সময়মত ছেড়ে যাওয়ায় যাত্রীরা ট্রেন মিস করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ঈদের মতো এবারও কোনো ঝামেলা ছাড়াই যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ট্রেনে ভ্রমণ করতে পেরেছেন।
এদিকে, গত বছর থেকে ট্রেনের সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। সবাই টিকিট নিয়ে প্লাটফর্মে প্রবেশ করছেন কীনা সেটা পরীক্ষা করতে রেলওয়ে কর্মীরা যাত্রীদের টিকিট চেক করছেন। তিন দফা চেক করার পরেই ট্রেন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছেন একেক যাত্রী। পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা পরিস্খিতি ঠিক রাখতে রেলওয়ে পুলিশ সব সময় টহল দিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে র্যাব ও পুলিশ।
যাত্রীদের চাপ কম দেখা গেছে সড়ক পথেও। বাস টার্মিনালগুলো তেমন একটা ভিড় ছিল না।
মহাখালী বাস টার্মিনালে এনা বাসের যাত্রী মোখলেচুর রহমান বলেন, পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি, আজকে আমি যাচ্ছি। তবে বরাবরের মতো এবারও বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ময়মনসিংহ ২৫০ টাকার ভাড়া এবার ঈদেও ৫০০ টাকা নিয়েছে কিন্তু টিকিটে লেখা ৩০০ টাকা। এটাতো জুলুম।
বাড়তি ভাড়ার অভিযোগের বিষয়ে কাউন্টারের টিকিট বিক্রয়কর্মী মহসিন বলেন, ঈদের সময় বকশিস হিসেবে যেটা ধরে দেওয়া হয়েছে তার বাইরে কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না।
মহাখালী বাস টার্মিনাল ছাড়াও গাবতলী, সায়দাবাদ, যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনালেও ভাড়া বাড়তি নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে দক্ষিণাঞ্চলে ছেড়ে যাওয়া বাস হানিফ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দুইশো টাকা বেশি নিচ্ছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন, গণমাধ্যকর্মী ফরহাদ হোসেন লিখেছেন, ঈদযাত্রার লোকালবাস ও টিকিটের বাস দুই রকমের জালিয়াতি করছে। উদাহরণসহ বুঝিয়ে দিচ্ছি। ঢাকা-ময়মনসিংহ সাধারণত লোকাল বাসে ভাড়া নেয় ২০০/ ২৫০ টাকা। কিন্তু আজকে যারা ঈদযাত্রায় যাচ্ছেন তাদের দিতে হচ্ছে ৫০০/ ৬০০ টাকা।
কিন্তু এই ভাড়ার বিপরীতে বাস কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট বা কাগজ কিছুই দিচ্ছে না। ফলে কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে চাইলেও তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না। যদিও পুলিশ ভাইয়েরা মিডিয়ার সামনে খুব সুন্দর করে বলেন, কেউ কোন অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আবার বাসের, সব যাত্রী মিলে যদি প্রতিবাদ করে তখন বাসওয়ালারা বলে দেয়, ৬০০ টাকায় গেলে যান, না গেলে নামেন অন্য যাত্রী উঠবে। আবার যারা বাড়তি ভাড়ায় যাচ্ছে তাদের ভাড়াটাও গাড়ি টার্মিনাল থেকে ছাড়ার আগেই নিয়ে নেয়, যাতে করে মাঝ পথে গাড়ির কিছু হলে যাত্রীর আর কিছু করার না থাকে।
তিনি আরও লেখেন, এবার আসেন টিকিটের বাস, এখানে বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সাথে বাসের লোকজনের কোনো ঝুট ঝামেলা হয় না। ধরেন, যারা ঈদ যাত্রার জন্য বরিশালে যাবেন, তাদের পটুয়াখালী বা বরগুনার টিকিট কাটতে হয়েছে। কারণ বরিশালের কোনো টিকিট নাই। এমনিতে বরিশালের ভাড়া ৫০০ টাকা, কিন্তু এখন আপনাকে শেষ যাত্রার ভাড়া হিসেবে ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে।
তবে এত কিছুর মাঝেও ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে এনা পরিবহন কিন্তু সঠিক ভাড়াটাই নিচ্ছে। তারা সারা বছর একই ভাড়া নেয়। এনা অন্য কোন রুটে বাড়তি নেয় কিনা জানি না। তো যাই হোক বাসের এই বাড়তি ভাড়া নেয়ার কথা কি প্রশাসন জানে না? অবশ্যই জানে। প্রতিটি বাস টার্মিনালে পুলিশের নাকের ডগায় এটা হয়। কিন্তু মুখ বুজে সয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ঈদের সময়ে সাধারণ ভাড়ার চেয়ে সামান্য কিছু ভাড়া বাড়তি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেটা প্রতি ঈদের সময়ই এ ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু যেটা বলা হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়ার কথা, সেটা ঠিক না।
তিনি বলেন, এটা হওয়ার কথাও না। যদি কোনো শ্রমিক নিয়ে থাকে তাহলে অসাধু উপায়ে সে নিচ্ছে। এটা আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি।
এদিকে, সদরঘাটে দূরপাল্লার লঞ্চগুলো যদিও বিকেল থেকে ছেড়ে যাওয়া শুরু করবে। তবে সকালে যেসব লঞ্চ ছেড়ে গেছে, সবগুলোতেই ঠাসা যাত্রী ছিল। বিশেষ করে চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের মতো কম দূরত্বের লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা ছিল বেশ। এখানেও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের।
টিপু লঞ্চের যাত্রী আশিকুর রহমান বলেছেন, ভাড়ার চেয়ে দেড়গুণ টাকা দিয়ে আগে থেকে টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু লঞ্চঘাটে এসে দেখেন বাড়তি যে টাকা গুণতে হয়েছে তাকে তার চেয়ে কমে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।
সারাবাংলা/জেআর/এনইউ