Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাড়ি ভাড়াতেই সব টাকা খরচ হয়ে গেলে বাড়ি গিয়ে করব কী?

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুন ২০২৪ ১৯:০২

ঢাকা: ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। আর এই আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে যান মানুষ। ঈদের আনন্দে দেখা হবে প্রিয় মুখগুলোর সঙ্গে—এমন আশা নিয়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ ব্যক্তিগত গাড়িতেও অনেকে বাড়ি যান।

ঈদের আনন্দে কোনো ধনী-গরিবের ভেদাভেদ না থাকলেও ঈদযাত্রায় সবার একইভাবে বাড়ি ফেরার সামর্থ্য হয় না। ট্রেনের টিকেট বেশি দামে কেনার সামর্থ্য না থাকা ও বাসের টিকেট কেনারও সামর্থ্য না থাকায় জীবনের ঝুঁকি জেনেও বাস, ট্রাকের ছাদে চড়েই বাড়ি ফেরেন অনেকে। আবার অনেকে বাড়ি ফেরার জন্য বেছে নেন ছোট বড় পিকাপ থেকে শুরু করে পণ্যবাহী ট্রাক। ক্লান্ত শরীরে চোখে ঝিমুনি ভাব থাকলেও এক হাত দিয়ে ট্রাক-পিকআপের ডালা ধরে রেখে বাড়ির পথে যাত্রা করেন হাজার হাজার মানুষের।

বিজ্ঞাপন

দেশের আইন অনুযায়ী এভাবে যাত্রার নিয়ম না থাকলেও নিম্ন আয়ের মানুষের তা নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। এই সুযোগে ঝুঁকি জেনেও কিছুটা বাড়তি আয়ের আশায় তাদের নিয়ে ছুটে চলে ট্রাক, পিকআপ চালকেরা। মহাসড়কের টহলে থাকা হাইওয়ে পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সামনে পড়লেই গাড়ি আটকে দেওয়া হবে জানলেও তারা ছুটে চলেন নিম্ম আয়ের মানুষদের নিয়ে।

নিম্ন আয়ের এই মানুষদের একজন তাহমিদুল। তার সঙ্গেই রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে ধান কাটার মৌসুমে কুমিল্লা আসেন দিলরওশন ও কাজল। ধানকাটা শেষে রাজমিস্ত্রির কাজও করেন কুমিল্লাতেই। তাদের কারো পকেটে আছে তিন হাজার আবার কারো পকেটে পাঁচ হাজার।

শুক্রবার (১৪ জুন) রাত ১০টা পর্যন্ত পকেটে থাকা টাকার অংকের সঙ্গে মিলিয়ে কোনো বাসেই উঠতে পারেননি তারা। পরে স্থানীয় একজনের সহযোগিতায় জনপ্রতি ৫০০ টাকা দরদাম করে একটা ট্রাকে উঠে যাত্রা শুরু করেন তারা।

বিজ্ঞাপন

তাহমিদুল বলেন, যে বাসেই কথা বলছি তারা ভাড়া চাইছে ১৮০০ টাকা করে। অথচ আগে আমরা ৮০০ টাকা দিয়ে যেতে পারতাম। পকেটে থাকা তিন হাজার টাকার মধ্যে যদি ১৮০০ টাকা গাড়ি ভাড়াতেই খরচ করি তাহলে বাড়ি গিয়ে আর করব কী?

দাউদকান্দি টোল প্লাজায় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আমিন মিঞা নামে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের। চট্টগ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়া আমিন মিঞা বলেন, গার্মেন্টসে হেলপার হিসেবে কাজ করি। বেতন পাই আট হাজার টাকা। এবার বোনাস বেশি পাই নাই তাই পকেটের অবস্থা খুব একটা ভালো না। চট্টগ্রামের বড়পোল, অলঙ্কার মোড়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২০-৩০টা বাসে কথা বলেছি। কিন্তু দুই হাজার টাকার নিচে কেউই যেতে রাজি হয় নাই। পরে সিটি গেট এলাকা থেকে ট্রাকে উঠেছি। ওই ট্রাকটা লালপোল পর্যন্ত আসার পরে নষ্ট হয়ে গেলে এই পিক আপে উঠে পড়ি। ঢাকায় পৌঁছাতে পারলে আশা করি আরেকটা কিছু ব্যবস্থা করে নিতে পারবো। সব মিলিয়ে চারশ থেকে পাঁচশত টাকায় আশা করছি পৌঁছে যাবো বাড়িতে।’

এভাবে পিকআপ যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আমিন মিঞা বলেন, কপালে মরা লেখা থাকলে তো যেকোনো সময়েই হইতে পারে। সারা বছরই তো কষ্ট করি। ঈদের দিনটা যদি মা বাপের লগে কাটাইতে না পারি তবে কি লাভ আর টেকা কামাইয়া? তাই যাই ইনকাম সেটাই খরচ করি ঈদে বাড়ি যাই।

পিকআপ, ট্রাক বা অন্যান্য পরিবহনের ছাদে চড়ে লোকজনের যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, এসব বিষয়ে প্রশাসন কড়া নজরদারি রাখে। কিন্তু এরপরেও দেখা যায় লুকোচুরি করে ঝুঁকি নিয়েই মানুষ গাড়ির ছাদে, মালবোঝাই পিকআপ, ট্রাকে করে যায়। এক্ষেত্রে সবাইকে আইন মানার অনুরোধ করি নিজেদের প্রাণের স্বার্থেই।

তিনি বলেন, যেখানে যখনই এই ধরণের পিকআপ বা ট্রাকে করে যাত্রী পরিবহণ দেখা যাচ্ছে তখনই তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে রাতের আধারে যদি কেউ যায় তবে তাদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ থাকবে যেনো এভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা না করেন।

অননুমোদিত যানবাহনে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত না করার জন্যে তিনি যাত্রী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বলেন, যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে কেউ যেন যাতায়াত না করে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

ঈদযাত্রা টপ নিউজ বাড়তি ভাড়া

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর