Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টেকসই হবে বন ও জীবিকা— প্রকল্পে অগ্রগতি, ফের বাড়ছে মেয়াদ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ জুন ২০২৪ ১০:০০

ঢাকা: অবক্ষয়িত বন, বৃক্ষহীন বন, সংরক্ষিত এলাকা ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বন পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বনভূমি রক্ষার পাশাপাশি বনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবিকা কীভাবে বন অক্ষত রেখেই নিশ্চিত করা যায়, সেটিও ছিল এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক হওয়ায় এবার প্রকল্পটির মেয়াদ আরও একবার বাড়ানো হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় এসে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে দেড় বছর।

বিজ্ঞাপন

২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ছিল টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের। এখন দেড় বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হচ্ছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল এক হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৪৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৫৫২ কোটি ৩০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে আসবে এক হাজার ৫২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে গত ৩০ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকী ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

আব্দুল বাকী সারাবাংলাকে বলেন, পিইসি সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপর বেশ কিছু সুপারিশ দিয়ে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংশোধন হয়ে এলে এরপরই অনুমোদনের পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করা হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা ১৭৫ মিলিয়ন ডলার (আইডিএ ক্রেডিট ইউএস ১৭৫ মিলিয়ন) এবং সরকারের আর্থিক অনুদান ৩ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলারসহ মোট ১৭৮ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ (১ ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে) এক হাজার ৫০২ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছিল। টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর প্রশাসনিক আদেশ জারি করা হয়।

পরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বন অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনামন্ত্রী ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন দেন। এটির অনুমোদিত ব্যয় এক হাজার ৫০২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩২ কোটি ৩২ লাখ টাকা ও প্রকল্প সহায়তা এক হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন মেয়াদ করা হয় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে এক দশমিক ৯০ মিলিয়ন হেক্টর প্রজ্ঞাপিত বনভুমি আছে। এর মধ্যে শূন্য ৪ মিলিয়ন হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় নতুন জেগে ওঠা চরভূমি রয়েছে। অবশিষ্ট এক দশমিক ৫ মিলিয়ন হেক্টর বন ভূমির মধ্যে অর্ধেক বনভূমিতে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রয়েছে। সারা দেশে মূলত দক্ষিণ পশ্চিম এলাকায় (সুন্দরবন), উত্তর-পূর্ব এলাকায় পাহাড়ি বন এবং মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম এলাকায় শাল বন রয়েছে। এসব এলাকায় অবৈধ গাছ কাটা, জবরদখল, শিফটিং কালটিভেশন ইত্যাদি কারণে বন উজাড় হচ্ছে। এ ছাড়া ছয় লাখ ৯৫ হাজার হেক্টর এলাকার আনক্লাসড স্টেট ফরেস্ট এরই মধ্যে উজাড় হয়েছে।

তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে খসড়া বন নীতি ও বন বিষয়ক মাস্টাররপ্ল্যান হালনাগাদ করা হয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণে বন ব্যবস্থাপনারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের মাধ্যমে অবক্ষয়িত বন, বৃক্ষহীন বন, রক্ষিত এলাকা ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল বন পুনর্প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আগের মতো প্রাকৃতিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাছপালার পরিমাণ ও পরিধি সম্প্রসারণের জন্য উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চর বনায়ন ও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

আরও বলা হয়েছে, বনভূমিসংলগ্ন দরিদ্র জনসাধারণ জীবিকার প্রয়োজনে মূলত বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল, যা বন উজাড়ের একটি অন্যতম কারণ। জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ বৃদ্ধি এবং অন্যান্য সামাজিক প্রেক্ষাপট বনজসম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বন উজাড়ের আশঙ্কাও বাড়ছে। এ অবস্থায় বননির্ভর ওইসব জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনাও এ প্রকল্পে নেওয়া হয়েছে।

সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনায় মূলত বননির্ভর দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বন ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বন অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এ সব জনগোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে বন সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরাসরি নিয়োজিত থাকছে। যেমন— পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাগান সৃজন, বাগান রক্ষণাবেক্ষণ, পাহারা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি। এর ফলে ওই জনগোষ্ঠী বন উজাড়ের পরিবর্তে বন সংরক্ষণে আগ্রহী হবে।

কোলাবরেটিভ বন ব্যবস্থাপনা কার্যকর করতে প্রকল্পে সাতটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া যারা প্রয়োজনীয় জরিপ, প্রোফাইলিং, কমিটি গঠন, ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ, বিকল্প জীবিকা বাস্তবায়ন, মনিটরিং এবং অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে। কিছু পরামর্শক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থাও প্রকল্পে রাখা হয়েছে। যার ফলে একটি সময় উপযোগী এলাকা নির্ভর পরিবেশ ও প্রতিবেশবান্ধব সহযোগিতামূলক বন ব্যবস্থাপনা মডেল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জনে সব কাজ মোট চারটি অঙ্গের আওতায় ভাগ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ কাজের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মিশনে প্রকল্প বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পের ফলাফল কাঠামোর প্রায় সব সূচকের অর্জন শেষ হয়েছে। এসব কারণে প্রকল্পটি মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

টেকসই বন প্রকল্প বন সংরক্ষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর