দ্রুত পানি বাড়ছে যমুনায়, নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি
২১ জুন ২০২৪ ১৫:১৪
সিরাজগঞ্জ: উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ সবগুলো নদীতে পানি বাড়ছে। এতে ভাঙন শুরু হয়েছে নদীপারে। আগেরবার ভাঙনের পর যা কিছু সম্বল অবশিষ্ট ছিল, সেটুকুও এখন রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় চরম আতঙ্ক নিয়ে দিন কাটছে যমুনপারের মানুষদের।
এদিকে এরই মধ্যে চর ও নিচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে পানি। দ্রুত গতিতে পানি বেড়ে যাওয়ায় যমুনা নদীর চরাঞ্চলে ফসিল জমি তলিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়া দুশ্চিন্তার পাশাপাশি বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে।
শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। অন্যদিকে কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯ মিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনকভাবে পানি বাড়ায় শাহজাদপুরের জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। কয়েক দিনের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভাঙন কবলিতরা বলছেন, জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে চলা ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়েছেন। অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতীক্ষার পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। সে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে কাজে গতি নেই। ফলে ফের ভাঙনের কবলে পড়েছে এসব অঞ্চল। চলতি মৌসুমে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। নদীতে সব কিছু হারিয়ে বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত এসব মানুষ।
একই উপজেলার কৈজুড়ি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, চরের জমিতে চাষবাদ করে সারা বছর চলতে হয়। প্রত্যেক বছর বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এক বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করছি। এখন দেখি পানি বাড়ছে। এভাবেই পানি বাড়লে চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জমি তলিয়ে যাবে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, এই মুহূর্তে চরের জমিতে তিল ও পাট চাষ করা রয়েছে। কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। আমরা সবসময় খোঁজ-খবর রাখছি। কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার ডান তীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর