‘ছাগলকাণ্ড’র মতিউর রহমান সোনালী ব্যাংকেরও পরিচালক

ঢাকা: কোরবানির জন্য দামি ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসা মুশফিকুর রহমান ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে। মতিউল রহমান এনবিআর সদস্যর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকেরও পরিচালক। তিনি ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

বর্তমানে তিনি ব্যাংকের পরিচালকের পাশাপাশি কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট আপিলেট ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা’র প্রেসিডেন্ট। ফলে একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কীভাবে এবং কার সুপারিশে সোনালী ব্যাংকের মতো দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

জানা গেছে, আলোচিত মতিউর রহমানের কলেজ পড়ুয়া ছেলে ঈফাত এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার অন্তত সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কেনেন। গতবছরও কিনেছেন ৬০ লাখ টাকার পশু। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও ছাগলটি ১২ লাখ টাকায় দাম চূড়ান্ত করে ১ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ছাগলটি আর নেওয়া হয়নি তার।

এদিকে মতিউর রহমান নিজের ছেলেকে অস্বীকার করে বলেন, ‘ইফাত তার ছেলে নয়, ইফাত নামে কাউকে তিনি চেনেন না।’

তবে একাধিক নিকটাত্মীয় ও জনপ্রতিনিধি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, ইফাত মতিউর রহমানেরই ছেলে ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারের প্রথম সন্তান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাতের মা শাম্মী আখতার শিভলী ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মী আখতারের বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী আখতার ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (ফেনী-২) নিজাম উদ্দিন হাজারীর আত্মীয়। বাবার অঢেল সম্পদে বিলাসী জীবনযাপন করেন ১৯ বছরের ইফাত। তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোনে যে সিমকার্ড ব্যবহার করছেন, সেটি তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তোলা।

এদিকে ১৫ লাখ টাকার ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

ইফাতের ছাগলকাণ্ডের পর এখন আলোচনা মতিউর রহমানের সম্পদের বৈধ উৎস নিয়ে। বিশেষ করে তার কত সম্পদ রয়েছে, সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের তথ্য বেরিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহে রয়েছে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিংস্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি। এছাড়াও তার ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ, এছাড়াও শেয়ারবাজারে রয়েছে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী।

এরইমধ্যে মতিউর রহমান নিজেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া (১৯ জুন প্রচারিত) এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বেশি দামে বিক্রি করে বড় অঙ্কের মুনাফা করেছেন।

উল্লেখ্য এনবিআর সদস্য ড. মতিউর রহমান বর্তমানে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাকে তিন বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

মতিউর রহমান ১১তম বিসিএসে বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পরে এই ক্যাডারের সাত কর্মকর্তাকে কাস্টমস ক্যাডারে একীভূত করা হয়। মতিউর রহমান তাদের মধ্যে একজন।

মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মুলাদি উপজেলায়। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ আগে সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন।

২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদেরও বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।

সারাবাংলা/জিএস/একে

এনবিআর কোরবানির ছাগল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড টপ নিউজ ড. মতিউর রহমান মুশফিকুর রহমান ইফাত