Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের ভূমিকা

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুন ২০২৪ ১০:৫৫

৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬’র ৬ দফা এবং ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেয় আওয়ামী লীগ। যার প্রতিফলন ঘটে ৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে। বাঙালি যে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। আর এ সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ, জন্ম নেয় বাংলাদেশ।

৭০-এর নির্বাচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শুধু মেজরিটি পার্টির নেতা হিসেবেই আবির্ভূত হননি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তিনি স্বীকৃত হন বাঙালি জাতির একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে। ৭০-এর নির্বাচনের গণম্যান্ডেট না থাকলে বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের (১৯৭১) স্বাধীনতার ঘোষণা চিহ্নিত হতো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে, যে-পথ বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিহার করে লক্ষ্যে এগিয়ে গেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আগেও তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। সেদিন তিনি কী বলতে পারেন, সেই সম্বন্ধে দেশে-বিদেশে নানা জল্পনা-কল্পনা চলে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত একাধিক পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু ওইদিন তার ভাষণে সরাসরি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারেন মর্মে খবর প্রকাশিত হয়। যেমন দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার প্রতিনিধি ডেভিড লোশাক ঢাকা থেকে যে সংবাদ পাঠান তাতে বলা হয়, ‘Sheikh Mujibur Rahman is expected to declare Independence tomorrow’. ৬ মার্চ এই সংবাদ তাদের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণ ছিল বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য এক যুগ-সন্ধিক্ষণ। সেদিনের ভাষণে বিগত ২৩ বছরে বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের শোষণ ও জাতিগত-নিপীড়নের বিবরণ তুলে ধরে আসন্ন মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি।

২৫ মার্চ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় মানব জাতির ইতিহাসে এক বর্বর গণহত্যা, যা ৯ মাস ধরে চলে। অপরদিকে সৃষ্টি হয় সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার প্রতীক্ষিত ক্ষণ। পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি) এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে যে সরকার গঠিত হয়, তা-ই ছিল প্রথম বাংলাদেশ সরকার, যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বিপুলসংখ্যক বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এই সরকারের অধীনেই পরিচালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ।

একটি নিয়মিত সরকারের মতো এর ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কেবিনেট সচিব ও অন্যান্য সচিব, স্থায়ী ও বেতনভুক্ত বেসামরিক-সামরিক সরকারি কর্মচারী। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে। প্রত্যেক সেক্টরে একজন করে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। অন্য সরকারি কর্মচারীদের মতো তারাও ছিলেন বেতনভুক্ত। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সর্বাধিনায়ক বা কমান্ডার-ইন-চিফ। জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনাদের প্রধান।

সরকার বাংলাদেশকে ১১টি সামরিক সেক্টরে বিভক্ত করার পাশাপাশি সমগ্র দেশকে কয়েকটি জোনে বিভক্ত করে রাজনৈতিক নেতাদের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ে বেসামরিক প্রশাসন-ব্যবস্থা গড়ে তোলে। দেশের মুক্ত অঞ্চলে বাংলাদেশ সরকারের অনুশাসন পালিত হয়।

মুজিবনগর সরকারের বৈধ ভিত্তি ছিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ৭২.৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় অর্জন করে (৩১৩টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন)। পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল আরও নিরঙ্কুশ। জাতীয় পরিষদে পূর্ব বাংলার জন্য নির্ধারিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি (৭টি নারী আসনসহ) লাভ করে। এর মধ্যে ১৬২টি এলাকাভিত্তিক আসনের মধ্যে মাত্র ২টি হাতছাড়া হয়, অর্থাৎ আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসন অর্জন করে। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদেও আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল অবিস্মরণীয়। ৩১০টি প্রাদেশিক পরিষদ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসন ও প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৮৯ ভাগ লাভ করে।

এই বিজয়ের ভিত্তিতেই ১০ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। এ সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। দিনটি ছিল শনিবার। বৈদ্যনাথতলার আমবাগানের চারদিকে রাইফেল হাতে কড়া প্রহরায় ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় ১০ হাজার মানুষের বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলীর স্বাধীনতা সনদ পাঠের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাঠের মধ্য দিয়ে ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তা সাংগঠনিক রূপ নেয়। শপথ অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ১২৭ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর পাশাপাশি মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, নেজামে ইসলামী পার্টি এবং পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) মোকাবিলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। কারণ, এসব রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যেই বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। এ ছাড়া, চৈনিক বামরাও ছিল পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। তারাও রণাঙ্গনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সবদিক বিবেচনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগ এককভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছে। আর দেশের মুক্তিকামী জনগণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়ের লাল সূর্য।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

আওয়ামী লীগ নির্বাচন মুক্তিযুদ্ধ মুজিবনগর সরকার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর