শেষ মুহূর্তে ১৮ ভাতার প্রস্তাব, আপত্তির মুখে পড়বে সেসিপ প্রকল্প
২৩ জুন ২০২৪ ১১:৫৩
ঢাকা: প্রকল্পের শেষ সময়ে ১৮ ধরনের ভাতার প্রস্তাব করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ)’ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে এসব ভাতা অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। তবে পরিপত্র বহির্ভূত এ প্রস্তাবে আপত্তি জানাতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন।
চলমান প্রকল্পটির ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে তিন হাজার ৫৩০ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ। রোববার (২৩ জুন) পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির প্রস্তাব নিয়ে অনুষ্ঠেয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় আপত্তি তোলা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠমো বিভাগের সদস্য (সচিব) রেহানা পারভীন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতায় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম শীর্ষক প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল এক হাজার ৬৫৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল এই প্রকল্প। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পায় একনেকে, যেখানে দুই হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় তিন হাজার ৮২৬ কোটি ৯২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্প প্রণয়ন সংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রকল্পের অঙ্গগুলোর সংখ্যা অপবির্তিত রেখে কেবল অনুমোদিত অঙ্গগুলোর জন্য সংস্থান করা মোট প্রাক্কলিত ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে অঙ্গগুলোর ব্যয় যৌক্তিকভাবে সমন্বয় করা যাবে। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রকল্পটির দ্বিতীয় আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় প্রস্তাবে কিছু নতুন অঙ্গ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— দায়িত্বভার ভাতা, যাতায়াত ভাতা, মহার্ঘ্য ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, পাহাড়ি ভাতা, বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, মোবাইল, টেলিভোন ভাতা, টিফিন ভাতা, উৎসব ভাতা, শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, বাংলা নববর্ষ উৎসব ভাতা, অন্যান্য ভাতা, বিশেষ সুবিধা ভাতা, বিদ্যুৎ, রেজিস্ট্রেশন ফি, জেনারেল প্রিন্টিং বা প্রিন্টিং ও বাইন্ডিং।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটিতে সব মিলিয়ে মোট ১৮টি নতুন অঙ্গ সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনীতে। নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও নতুন অঙ্গ সংযোজনের প্রস্তাব করার বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে। এ বিষয়টি নিয়েই পিইসি সভায় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, এসব ভাতার প্রস্তাব নিয়ে কঠোরভাবে প্রশ্ন তোলা হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারলে এসব বিষয় বাদ দেওয়া কিংবা কমানোর সুপারিশ দেওয়া হতে পারে। আর যদি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা প্রকৃত অর্থেই নতুন অঙ্গগুলো সংযোজনের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারেন, তাহলে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি সহায়তায় জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ বিষয়ে প্রণয়ন করা প্রতিবেদনে সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য এডিবি মাল্টি ট্রান্স ফিন্যানসিং অ্যাগ্রিমেন্ট প্রোগ্রাম: এমএফএ-এ ১০ বছর মেয়াদে (২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) কর্মসূচি নেওয়ার প্রস্তাব সরকারের জন্য পেশ করা হয়। ২০১৩ সালের ২২ জুলাই সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মধ্যে তিনটি ট্রাঞ্চে সেসিপ বাস্তবায়নের জন্য মোট ৫০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ফ্রেমওয়ার্ক ফিন্যান্সিং অ্যাগ্রিমেন্ট (এফএফএ) সেই হয়।
প্রকল্পের আওতায় চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য রাজস্ব খাতে সৃষ্ট পদগুলো পূরণের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় পঞ্চমবারের মতো প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পরে বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্য প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ অতিরিক্ত ৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় মেটানোর জন্য দ্বিতীয় আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় এর আগে ২০২১ সালের ৭ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ পর্যায়ে শেষ হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির সর্বশেষ অনুমোদিত মেয়াদকাল ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পটির তিনবার সংশোধন, একবার আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয় ও পাঁচবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে দ্বিতীয়বার আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের প্রস্তাব নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
টপ নিউজ পরিকল্পনা কমিশন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সেসিপ প্রকল্প