দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত
৩১ মে ২০১৮ ২০:০৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত; যা কি-না পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এ রোগের প্রাদুর্ভাব।
আগমী ১২ জুন প্রথম আন্তর্জাতিক ‘ন্যাশ দিবস’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৩১ মে) রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব ও কারণ’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে জানানো হয় এক গবেষণার প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ লিভারে চর্বি রোগে আক্রান্ত। সেই হিসেব অনুযায়ী দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ এ রোগে ভুগছে অর্থাৎ দেশের মানুষের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, ‘গ্রামের স্থুলকায় নারীদের ৭৩ দশমিক ২১ শতাংশ এ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৭১ শতাংশ এবং উচ্চরক্তচাপ আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ শতাংশের লিভারে চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের নেতৃত্বে গবেষণা কার্যক্রমে আরও ছিলেন বিএসএমএমইউ, বারডেম হাসপাতাল ও ফ্লোরিডা ইউনির্ভাসিটির কয়েকজন গবেষক।
গবেষণা থেকে অধ্যাপাক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, ‘যাদের আয় কম তাদের তুলনায় উচ্চ আয়ের ব্যক্তিগণের আক্রান্ত হওয়ার হার প্রায় দেড়গুণ বেশি। তবে নারী-পুরুষ এবং শিক্ষাগতযোগ্যতা ভেদে রোগের প্রাদুর্ভাব এ কোনো ভিন্নতা দেখা যায়নি। মূলত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা ধরনের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
গবেষণাতে আরও দেখা যায়, স্থুলতার কারণে ১০ দশমিক ৭১ গুণ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ঝুঁকি প্রায় ২ দশমিক ৭১ গুণ বেশি।
স্কয়ার হাসপাতালের কনসালটেন্ট ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক ডা. শেখ বাহার হোসেন বলেন, ‘লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হচ্ছে লিভারে চর্বি জমা জনিত প্রদাহ। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বলা হয়। এই রোগের আগের স্তরের নাম হচ্ছে ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি রোগ এ রোগ ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুদ্দিন আহমদ বলেন, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনসচেতনতা সৃষ্টি, জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন, দৈনন্দিন এক্সারসাইজ করতে হবে। তা হলে ফ্যাটি লিভার রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খান।
গবেষক দলটি সারাদেশে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা লিভারের চর্বি রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করতে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা এবং দেশের বৃহত্তম চার বিভাগের চারটি জেলা শহর ও চারটি উপজেলা শহরে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এ গবেষণা শুরু হয় এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সর্বমোট ২৭৮২ জন সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মক্ষম ব্যক্তি এই গবেষণা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ১৬৯৪ জন পুরুষ এবং ১০৮৮ জন মহিলা ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের বয়সসীমা ছিল ১৮ থেকে ৮৫ বছর এবং তাদের গড় বয়স ছিল ৩৪ বছর।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই