Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৪ দিন ধরে অন্ধকারে পদ্মার চরের ১৩০০ পরিবার

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২৪ ১১:৫৫

সৌর বিদ্যুতে আলোকিত হতো পদ্মার দুর্গম চর আষাড়িয়াদহ। হঠাৎ প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন চরের বাসিন্দারা। ছবি: সারাবাংলা

রাজশাহী: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মার দুর্গম চর আষাড়িয়াদহ। গোদাগাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়নও এটি। দুর্গম এই চরে সৌর বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বসিয়েছিল বেসরকারি একটি সংস্থা। চার দিন আগে এই প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে গেছেন। এরপর বন্ধ হয়ে গেছে প্ল্যান্টটি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন চরের ১৩০০ পরিবার। চার দিন থেকে পুরো চর অন্ধকারে নিমজ্জিত।

৯ বছর আগে সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) কারিগরি সহযোগিতায় চর আষাড়িয়াদহে সৌর বিদ্যুতের প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারি সংস্থা আভা। প্ল্যান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রিড প্রজেক্ট। সেখানেই ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকা মিল্লাত হোসেন গত বৃহস্পতিবার (২০ জুন) চাকরি ছেড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি সংস্থা আভা বলছে, ব্যবস্থাপক মিল্লাত নিয়ম মেনে চাকরি ছাড়েননি। অন্যদিকে মিল্লাত জানিয়েছে, চরটিতে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছিলেন না বলেই চাকরি ছেড়েছেন তিনি। আর চরের অধিবাসীরা বলছেন, সমস্যা যারই হোক না কেন, এখন তার জন্য ভুগতে হচ্ছে তাদেরই।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে সৌর বিদ্যুৎ দিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এ প্ল্যান্টটি স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় এক হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রি-পেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসান হচ্ছিল বলে আভার দাবি।

বিজ্ঞাপন

ইডকলের সহায়তায় আভা মিনি গ্রিড প্রজেক্ট নামে সৌর বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বসিয়ে ২০০৯ সাল থেকে এই চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে বেসরকারি সংস্থা আভা। ছবি: সারাবাংলা

এই প্ল্যান্টে মোট ৫৯৪টি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা আছে। এগুলোর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়েছিল ১৪৮ দশমিক ৫০ কিলোওয়াট। কিন্তু প্যানেলের কার্যক্ষমতা কমে বর্তমানে মাত্র ৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। ১৩০০ পরিবারের ১৩০০ মিটারে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিকে প্ল্যান্ট থেকে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দুয়েক হলো শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা ও রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এতে কোনোমতে ফ্রিজটা চলত। কাল থেকে একেবারেই বন্ধ। ফ্রিজের ভেতর প্রায় ৬০ কেজি মাংস ছিল। এগুলো বের করে রান্না করা হচ্ছে। খাওয়া যাবে কি না জানি না।’

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়া ঈদের পর এভাবে বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ফ্রিজের কোরবানির মাংস বের করে রান্না করতে হচ্ছে সবাইকে। চরের বেশিরভাগ মোবাইল চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রিজ-টিভিগুলোর এখন কী হবে, কেউ জানে না। প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে মিটার নিতে হয়েছে। সেটাও তো এখন লোকসান।’

আভা মিনি-গ্রিড প্রজেক্টের প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপক হিসেবে শুরু থেকেই কর্মরত ছিলেন মিল্লাত হোসেন। এ ছাড়া আরও দুজন কর্মচারী সেখানে থাকতেন। গত বৃহস্পতিবার মিল্লাত হোসেন চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে যান।

শুরুর দিকে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌর বিদ্যুতের সেলগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় বছর দুয়েক হলো চরের চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হতো এই প্ল্যান্ট থেকে। ছবি: সারাবাংলা

যোগাযোগ করা হলে মিল্লাত হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা ১২০ কিলোওয়াটের। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। সে কারণে প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।’ এভাবে চাইলেই প্ল্যাট বন্ধ করে দেওয়া যায় কি না— এমন প্রশ্ন করলে তার কোনো উত্তর দেননি তিনি।

জানতে চাইলে আভার মহাব্যবস্থাপক শালেহ উদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাকরি ছাড়তে হলে অন্তত একমাস আগে জানাতে হবে। তাহলে কর্তৃপক্ষ সেখানে নতুন লোক দেবে এবং কার্যক্রম চালু রাখবে। কিন্তু মিল্লাত চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েই প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে এসেছেন। চাহিদামতো বিদ্যুৎ দিতে না পারার কারণে লোকজন মন্দ কথা বলতেন। তাই হয়তো মিল্লাত চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’

গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, আমি শুনেছি যে আভা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। এতে চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রুত যেন এ প্ল্যান্ট চালু করা হয় তার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণও করেছি। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে যদি বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সেটাও যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হয়। তা না হলে চরের জীবন-জীবিকা আবার থমকে যাবে।

জানতে চাইলে নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ স্থায়ী সমাধান নয়। এটি যুগ যুগ চলবেও না। দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ সরকারের অগ্রাধিকার ছিল বলেই নেসকো বিনামূল্যে আভাকে নানা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু নদী পার করে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। আভা সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আমাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর দেখি কী করা যায়।’

সারাবাংলা/টিআর

আভা এনজিও আভা মিনি গ্রিড পদ্মার চর রাজশাহী সৌর বিদ্যুৎ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর