‘পারিবারিক বিরোধে’ পানিবন্দি জয়পুরহাটের ৪ হাজার মানুষ
২৪ জুন ২০২৪ ০৮:৪৬
জয়পুরহাট: বর্ষার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ করে দেওয়ায় গত সাত দিন ধরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের ৫ গ্রামের প্রায় চার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানিতে গ্রামগুলোর প্রতিটি পথঘাট ডুবে আছে। বর্ষার পানির সঙ্গে ডোবার নোংরা পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেই দুর্গন্ধযুক্ত পানি ভেঙেই যাতায়াত করছেন গ্রামের মানুষরা।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, পারিবারিক বিরোধের জেরে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ বন্ধ করে দিয়েছে শাহ আলম মন্ডল ওরফে আলম নামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী। এরপর থেকে তারা এ সমস্যায় পড়েছেন। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও আলমের একগুয়েমির কারণে সমাধান মেলেনি।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের ধারকী আকন্দপাড়া, বড়াইল পাড়া, ফকির পাড়া, মন্ডল পাড়া ও প্রধান পাড়া গ্রামে সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামগুলোর ইটবিছানো সংযোগ সড়কগুলো পানিতে ডুবে আছে। খড়ের পালা, বাড়ি-ঘরের আঙিনা এবং সীমানা প্রাচীরের নীচ পর্যন্ত ছুঁই ছুঁই করছে বর্ষার পানি। বড়াইল পাড়া জামে মসজিদে যাওয়ার রাস্তাও হাঁটু পানির নিচে। নর্দমার পানির সঙ্গে বর্ষার পানি মিশে নোংরা হয়ে পড়েছে। সেই নোংরা পানি ভেঙেই গ্রামের মানুষরা যাতায়াত করলেও নারী এবং শিশুরা চলাচল করতে পারছে না। বাড়ির আঙিনায় পানি ওঠায় অনেকেই রান্নাও করতে পারছেন না।
ভুক্তভোগী আকন্দপাড়া গ্রামের মোজাহার আকন্দ বলেন, ‘বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি বর্ষা মৌসুমে পানি নির্দিষ্ট পথে ড্রেনের মাধ্যমে অপসারিত হয়। কিন্তু প্রায় বছর তিনেক আগে এ গ্রামের শাহ আলম মন্ডল ওরফে আলম নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন। সেই থেকে পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছি আমরা। প্রতিবাদ করতে গেলেই আলম মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখায়। সমাধানের জন্য ইতোপূর্বে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলেও আলমের কারণেই তা ভেস্তে গেছে।’
ওই গ্রামের মাছুদ আকন্দ বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এ গ্রামগুলোর পানি ধারকী গ্রামের কয়েক শরিকের মালিকানাধীন পরিত্যক্ত দু’টি পুকুর দিয়ে ড্রেনের মাধ্যমে নিষ্কাশন হয়ে আসছিল। প্রভাবশালী শাহ আলম মন্ডল পুকুর দুটি দখলে নিয়ে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেন। পরে উপজেলা পরিষদ থেকে গ্রামবাসীর স্বার্থে ড্রেন পাকা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হলেও শাহ আলম সেই ড্রেনও ভেঙে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে দেন।’
ধারকী বড়াইল পাড়া গ্রামের মাহমুদুল হোসেন বলেন, ‘আমরা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ শ্রমজীবী ও কৃষক। রাস্তাগুলো পানিবন্দি থাকায় আমরা কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারছি না। আবার অনেক অটোরিকশা ও ভ্যানচালক গ্রামবাসী অটো বা ভ্যান নিয়ে গ্রামে ঢুকতেও পারছেন না। আমরা খুব কষ্টে আছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেও কোন সমাধান হয়নি।’
বড়াইল পাড়া গ্রামের তাজেল ইসলাম বলেন, ‘পানিবন্দি হওয়ায় গ্রামের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এমনকি রাস্তা ডুবে থাকায় মসজিদেও তারা ঠিকমত যেতে পারছেন না।’
গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে অভিযুক্ত ধারকী গ্রামের শাহ আলম মন্ডল প্রতিবেদকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার জায়গা দিয়ে আমি পানি যেতে দেবো না। লেখালেখি করে কোন লাভ হবে না।’ এ সময় উপজেলা পরিষদের নির্মাণ করা ড্রেনের ভেঙে ফেলা অংশের ছবি তুলতে গেলেও তিনি বাধা দেন।
জেলা প্রশাসক সালেহীন তানভীর গাজী বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের গতিপথের প্রবাহ বন্ধ করার কোন অধিকার কারো নেই। শিগগিরই এটি উচ্ছেদ করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তরা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩৩ ধারায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দিলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও