মৌসুমের আগেই মৃত্যু হারে রেকর্ড, ৭১% ঢাকাতেই
২৪ জুন ২০২৪ ২২:১৫
ঢাকা: বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হার বেড়েছে। ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয় ছয় হাজার ৩৩৯ জন। এর মাঝে মারা যান ৪০ জন অর্থাৎ প্রতি ১৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর একজন মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু রোগীর সংখ্যা কমলেও চলতি মৌসুমে বেড়েছে মৃত্যু সংখ্যা ও হার।
রোববার (২৩ জুন) পর্যন্ত তিন হাজার ৩১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ জন মারা গেছে। অর্থাৎ প্রতি ৮১ জনে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৪১ জনের মাঝে ২৯ জনই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন। যা মোট মৃত্যু সংখ্যার ৭০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টারের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৪১ জনের ২৫ জনই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালে মারা গেছেন। ২০০০ সালে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রথম ছয় মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সব পরিসংখ্যান ভেঙে দেওয়া ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৪০ জন।
সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যেই এডিস মশার লার্ভা নির্মূলের জন্য অভিযান শুরু হয়েছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার আশাবাদ তাদের। তবে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় মতো সঠিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। তাই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। আবার যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের একটা বড় অংশের মাঝে একাধিক সেরোটাইপ দেখা দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এমন অবস্থায় রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও বাড়বে।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির পানি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে জমে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বাড়াচ্ছে। ঠিক এমন সময়েই ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছে মানুষ। এই চলাচলের সময় যদি সতর্ক না থাকে তবে এডিসের লার্ভাও এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরছে। ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে। এ কারণে জুলাইয়ের দিকে রোগীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এই পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য দ্রুত এডিসের বংশ বিস্তারের উপযোগী পরিবেশ চিহ্নিত করে সেগুলো বিনষ্ট করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বর্তমানের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, ২৩ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে তিন হাজার ৩৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এক হাজার ১৯৫ জন। সর্বোচ্চ ২৪৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে আট জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ ১১ জন ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চার জন রোগী মারা গেছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। ঢাকা মহানগরীর বাইরে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন দুই হাজার ১৯০ জন। এর মাঝে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে ৪৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ৯৩২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে মারা গেছেন চার জন। ময়মনসিংহ বিভাগে এখন পর্যন্ত ৭৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। খুলনা বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৭৭ জন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৫০ জন, রংপুর বিভাগে ২১ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ সব বিভাগে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম। তবে বরিশাল বিভাগে ২৩ জুন পর্যন্ত ৪৭৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে আট জন মারা গেছে। এই বিভাগে মৌসুমের প্রথম ছয় মাসে এত মৃত্যুর ঘটনা এবারই প্রথম।
প্রথম ছয় মাসেই ছাড়িয়েছে অতীতের মৃত্যুর সব রেকর্ড
চলতি বছর জানুয়ারি মাস ২৩ জুন পর্যন্ত ইতোমধ্যেই মারা গেছেন ৪১ জন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্তের পরে এত মৃত্যু কখনো দেখা যায়নি। ২০২৩ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
ধরন পাল্টে ভয়ংকর রূপ
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের বড় অংশই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার সংক্রমিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই গুরুতর রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হয়। আর তাই ঢাকার মৃত্যু সংখ্যা ও হার বেশি। তবে এবার বরিশালেও কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। তাই বোঝা যাচ্ছে ডেঙ্গু এখন আর কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নেই। সংক্রমণ কমানো না গেলে মৃত্যুও ঠেকানো সম্ভব হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে এ বছর তিনটি ধরনই সক্রিয়। ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি হওয়ার এটিও একটি কারণ। প্রথমবার আক্রান্ত হলে তত বেশি সমস্যা হয় না। অনেকে বুঝতেই পারে না। কিন্তু দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার কিংবা চতুর্থবার আক্রান্ত হলে রোগী ভয়ংকর অবস্থায় চলে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, বেশির ভাগ মানুষের প্রথমবার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। অনেকে আছে যাদের এরই মধ্যে চারবার ডেঙ্গু হয়ে গেছে। তবে সবারই কিন্তু চারবার হয়নি। দ্বিতীয় বা আরও বেশিবার আক্রান্ত হলে অনেকের অবস্থা খারাপ হতেই পারে। সে কারণে বলা যায়, এবার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে মৃত্যুর হার বাড়ার আশঙ্কাও বেশি।
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর ধরন পাল্টানোর রোগীদের শরীরে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা। ফলে রোগীদের সুস্থ হতে ৭-১০ দিন সময় লাগছে। ঈদের সময় অন্য রোগী কমে গেলেও ডেঙ্গু রোগী কমেনি।’
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিপরীতে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা খুব অপ্রতুল। গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে উঠলেও সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ জনবল-সরঞ্জাম নেই। চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া মৃত্যু কমানো সম্ভব নয়।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশে আমরা বিগত বছরগুলোতেই দেখেছি ডেঙ্গু কীভাবে ছড়িয়েছে। একদিকে রোগী বেড়েছে আর তার সঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমন পরিস্থিতিতে আসলে আমাদের সিটি করপোরেশনগুলোর আরও কার্যকর ভূমিকা দেখার আশা করছি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে সার্ভিল্যান্স করা ও সেটা মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতেও এমন সার্ভিল্যান্স করা জরুরি।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মশা মারার কীটনাশক কোনো কাজ করছে কি না সে বিষয়ে আসলে তেমন কিছুই কেউ জানে না। কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা তাও বোঝার উপায় নেই। ফলে বলা যায়, দেশে এডিস মশা নির্মূলে সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ হচ্ছে না। তাছাড়া মশক নিধনে দেশের সচেতন নাগরিকদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। এখন ডেঙ্গু আর শহরের রোগ নেই। অ্যাডিস মশা গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। বাসাবাড়ির মশা এক পদ্ধতিতে নির্মূল করতে হবে। বন, জঙ্গল ও ঝোপের মশা ধ্বংস করতে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি।’
সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখনকার বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা দুটিই এডিস প্রজননের জন্য উপযোগী। ধারণা করা হচ্ছে, জুলাইয়ের শেষ ভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন মশা নিয়ে গবেষণা করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এ বছর ডেঙ্গু বেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের কিছু জেলায় যেমন- চট্টগ্রাম, বরিশাল, বরগুনা, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও খুলনায় ডেঙ্গুর ব্যাপক সংক্রমণ হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্যবারের তুলনায় এবার জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রোগীর যে সংখ্যা দেখা গেছে তা উদ্বেগজনক। এই সময়ে ৪১ জন মারা গেছে, যা অবশ্যই অপূরণীয় ক্ষতি। অথচ এখন পর্যন্ত কিন্তু বৃষ্টি তেমনিভাবে শুরু হয়নি। আর তাই সামনের দিনগুলোতে সবাই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে।’
অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ‘হটস্পট ব্যবস্থায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগী যেসব এলাকা থেকে বেশি আসে, সেখানে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। দরকার হলে সেখানে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। তা হলে এক রোগী থেকে অন্য রোগী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। যদি এমনটা না হয় তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীর হার সমান নয়। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেখানে মশক নিধনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাইকিং, জনসচেতনতা, ওষুধ ছিটানো— সবকিছু একসঙ্গে করতে হবে। এমনটা না করতে পারায় এখন পর্যন্ত জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু।’
অধ্যাপক বাশার বলেন, ‘আমরা একটা জরিপ করে দেখেছি যে, এডিস মশা কীভাবে হয়, প্রজননস্থল, বদ্ধ, স্বচ্ছ পানি- এর সবকিছুই জানে দেশের মানুষ। তারপরও তারা সচেতন হন না। এটা একটা মানসিকতা। এর পরিবর্তন দরকার। আর সিটি করপোরেশন যতই বলুক তারা মশার উৎস ধ্বংস করছে। কিন্তু উড়ন্ত এডিস মশা থেকে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। বাসা বাড়ি বা আশপাশে যেন পানি জমা না থাকে, পানি জমার মতো কোনো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, কোথাও যেন পরিত্যক্ত টায়ার বা কোনো ধরনের পাত্র পড়ে না থাকে, এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’
ডেঙ্গু প্রতিরোধে ধ্বংস করতে হবে মশার প্রজননক্ষেত্র
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. শেখ দাউদ আদনান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, ডেঙ্গু যখন কোনো কমিউনিটিতে প্রবেশ করে, তখন তাকে একেবারে নির্মূল করা যায় না। যেহেতু সামনে আরও নগরায়ণ হবে, আরও উন্নয়ন হবে, আমাদের আগে-ভাগে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।’
ঢাকার ২ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ যা বলছে
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ তা নির্ণয় করে কার্যকরী পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে। আমাদের অভিজ্ঞ দল ইতোমধ্যেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে নগরবাসীকে নিজ দায়িত্বে বাসাবাড়ি পরিষ্কার করা এবং কোথাও যেন পানি না থাকে, তা দেখে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। এক সপ্তাহের ছুটির মধ্যে শুধু ঈদের দিন তাদের মশক নিধন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ঈদের আগে ও পরে প্রতিটি দিন ফগিং ও লার্ভিসাইডিং কার্যক্রম চালু ছিল। মাঠপর্যায়ে ৯৭৫ জন কর্মী ও সুপারভাইজার কাজ করছেন। সকাল ও বিকেলে রুটিন মেনে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। প্রয়োজন হলে আরও জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমাদের বিশেষজ্ঞ দল সার্ভিল্যান্সের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সার্ভিল্যান্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মেনে কাজ করে যাচ্ছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় সবাইকে একটা অনুরোধই করি, তা হলো তিন দিনে একদিন, জমা পানি ফেলে দিন। কারণ আমরা জানি বর্ষার মৌসুম শুরু হয়েছে। এটি এডিস মশার বংশ বিস্তারের উপযুক্ত সময় ও পরিবেশ। সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে বাসা-বাড়িসহ আঙিনার কোথাও পানি জমে থাকছে কি না। যদি পানি জমে থাকে, পাত্রটি উল্টে দিন। পরিত্যক্তপাত্র কাজে না লাগলে ধ্বংস করে ফেলুন। কারণ এসব পাত্রেই এডিস মশা বংশ বিস্তার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মশককর্মীরা নিয়মিতভাবে ওষুধ ছিটিয়ে যাচ্ছেন। ঈদুল আজহার বন্ধেও তারা থেমে ছিলেন না। এত কিছুর পরও যদি কারও ব্যক্তিগত আঙিনায় মশার লার্ভা পাওয়া যায়, আমরা মামলা ও জরিমানা করছি। কারণ সবার আগে মানুষের জীবন।’
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম