Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পালিয়ে আসা তরুণীর তথ্যে মিলল নারী পাচারকারী চক্রের সন্ধান

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২৪ ২১:৩৫

নারী পাচার [প্রতীকী ছবি]

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভারতে নারী পাচারকারী একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রটির এক সদস্যকে।

পুলিশ জানিয়েছে, চাকরি দেওয়ার কথা বলে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুই তরুণীকে। এক তরুণী কৌশলে পালিয়ে দেশে চলে আসেন। তবে আরেকজন এখনো ‘নিখোঁজ’ আছেন। দেশে ফেরা তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে পাচারকারী চক্রটির সন্ধান পাওয়া গেছে।

রোববার (২৩ জুন) গভীর রাতে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার চন্দ্রনগর আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই চক্রের সদস্য মো. তারেককে (৩৪)। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে। নগরীর চন্দ্রনগর আবাসিক এলাকায় দিদার ভবনে থাকেন তিনি।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা সারাবাংলাকে জানান, তারেক ছাড়াও চক্রের আরও তিন সদস্যের নাম-পরিচয় তারা জানতে পেরেছেন। তারা হলেন— ঝুমু, পারভিন আক্তার ও আনিছুর রহমান। এর মধ্যে ঝুমু সম্পর্কে তারেকের স্ত্রী।

পুলিশের তথ্য বলছে, এই চক্রের সঙ্গে ভারতের ঝাড়খণ্ডের একটি অপরাধী চক্রের যোগাযোগ আছে। এরা পরস্পরের যোগসাজশে সীমান্ত এলাকার ‘দালালে’র মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিভিন্ন বয়সী নারীদের অনুপ্রবেশ ঘটায়। এরপর ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন হোটেলে তাদের আটকে রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করে। তারেকসহ চক্রের সদস্যদের বৈধ-অবৈধপথে নিয়মিত ভারতে যাতায়াতের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ওসি।

পুলিশ জানায়, পাচারের শিকার তরুণী পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচি থেকে কোলকাতা হয়ে গত ৬ জুন দেশে পালিয়ে আসেন। এরপর ২৩ জুন তিনি চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তরুণীর বাড়ি রংপুর জেলায়। পোশাক কারখানায় চাকরির সুবাদে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার আমানবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। পাশের মাইজপাড়া এলাকায় রয়েল অ্যাপারেলস নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। গত এপ্রিলে তিনি ও তার বান্ধবী চাকরি ছেড়ে দেন।

২০২১ সালে তারা হাটহাজারীর চৌধুরীহাটে গার্মেন্টস পার্ক নামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। একই কারখানায় পারভিন আক্তার নামে এক নারীও কর্মরত ছিলেন। রয়েল অ্যাপারেলস থেকে চাকরি ছাড়ার পর নতুন কাজের খোঁজে পারভিন আক্তারের কাছে গিয়ে মূলত দুই তরুণী পাচারকারী চক্রের খপ্পড়ে পড়েন।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গত ২০ মে পারভিন আক্তারের সঙ্গে নগরীর অক্সিজেন মোড়ে তারা দেখা করেন। পারভিন তাদের ভারতের রাঁচিতে পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন। রাজি হলে পরদিন সকালে তাদের তারেকের বাসায় নিয়ে যান। তারেকের স্ত্রী ঝুমু তাদের জানান, ভারতে পার্লারে চাকরি করলে তারা মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন পাবেন, তবে ভারতের যাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে হবে।

২৯ মে সন্ধ্যায় দুই বান্ধবীকে নিয়ে তারেক, ঝুমু ও পারভিন নগরীর দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে যশোরের পথে রওয়ানা দেন। পরদিন ভোরে তাদের যশোরে আনিছুর রহমানের বাসায় নেওয়া হয়। সেদিন রাতে তারা সীমান্ত এলাকায় পৌঁছে একটি কলাবাগানের ভেতরে অবস্থান নেন। সেখান থেকে কখনো ভ্যানে, আবার কখনো পায়ে হেঁটে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পাড়ি দিয়ে ৩১ মে ভোরে ভারতে পৌঁছান। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঝুমু ও পারভিন এবং ভারতের সীমান্ত এলাকার কয়েকজন দালাল।

ভারতের ভেতরে সীমান্তবর্তী এলাকায় এক দালালের বাসায় তারা আশ্রয় নেন। ৩১ মে ভোরে পারভিন এক তরুণীকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশে চলে যান। আরেক তরুণী, যিনি মামলার বাদী, তিনি ওই দালালের আশ্রয়ে তিন দিন ছিলেন। ২ জুন রাতে ঝুমু তাকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছান। রাঁচিতে একই হোটেল দুই বান্ধবীকে রাখা হয়। শুরুতেই তারা জানতে পারেন, ওই হোটেলে পতিতাবৃত্তি হয়। তাদেরও মূলত এ কাজের জন্য সেখানে নেওয়া হয়েছে। দুজন কান্নাকাটি করতে থাকলে তাদের মারধর করা হয় এবং একপর্যায়ে আলাদা করে ফেলা হয়।

৩ জুন বিকেলে হোটেল থেকে পালিয়ে এক তরুণী রাঁচি থেকে ট্রেনে করে কোলকাতার হাওড়া স্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি মোবাইলে তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। হাওড়া স্টেশনে বিভিন্নজনের সহায়তায় ট্রেনে করে যশোর সীমান্তে যান। এরপর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ৬ জুন ভোরে তিনি দেশে পৌঁছান।

ওসি সঞ্জয় কুমার সিনহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশে ফিরে আসা তরুণী জানিয়েছেন, তাদের পাচারের পর রাঁচিতে মনীষা রায় নামে এক নারীর কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। ওই নারী তাদের হোটেলে রেখেছিল। খুব সম্ভবত পুলিশের অভিযানের মুখে অথবা বিপদের আঁচ করে মনীষাই আবার এক তরুণীকে কোলকাতার হাওড়া স্টেশনে পাঠিয়ে দেন। তার লোকজনই যশোর সীমান্তে এনে তাকে আবার বাংলাদেশে ফেরত আসতে সহায়তা করেন।’

‘আরেক তরুণীর বিষয়টি আমরা এখনো স্পষ্ট না। মামলার বাদী জানিয়েছেন, ওই তরুণীকে আলাদা হোটেলে নেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে উনি পালিয়ে গেছেন। আদৌ এর সত্যতা কতটুকু, জানি না। তিনি কি ঝাড়খণ্ডের পুলিশ হেফাজতে আছেন, নাকি এখনো পাচারকারীর হাতে জিম্মি রয়েছেন, নাকি দেশে ফিরেছেন— আমরা খতিয়ে দেখছি,’— বলেন ওসি সঞ্জয়।

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতার তারেকের কাছে তথ্য থাকতে পারে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না বলে জানিয়েছে। আজ (সোমবার) তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পেলে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

টপ নিউজ নারী পাচার পাচারকারী চক্র বায়েজিদ বোস্তামি থানা ভারতে নারী পাচার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর