‘প্রধানমন্ত্রীর আপত্তির কারণে বিদেশ যেতে পারেননি খালেদা জিয়া’
২৫ জুন ২০২৪ ১৪:১৮
ঢাকা: সব কিছু ঠিকঠাক থাকার পরও কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপত্তির কারণে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
মঙ্গলাবর (২৫ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন।
তিন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার সবার সঙ্গে কথা বলে তার বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি ঠিক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু, ফাইলটা যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়, তখন তিনি ব্যানড করে দেন। অর্থাৎ সব কিছু ঠিকঠাক থাকার পরও কেবল প্রধানমন্ত্রীর আপত্তির কারণে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
‘আমরা বিদেশি মিশন এবং দূতাবাসগুলোকে দিয়েও কথা বলিয়েছিলাম। তারা (কূটনীতিক) ওনাকে (প্রধানমন্ত্রী) রিকোয়েস্ট করেছিলেন। কিন্তু উনি (প্রধানমন্ত্রী) কিছুইতেই রাজি হননি খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে। তারা (বিদেশি কূটনীতিক) আমাদের জানিয়েছেন, উনি (প্রধানমন্ত্রী) এ বিষয়টিকে অ্যাকসেপ্ট করছেন না’— বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমনটি কেন করছেন? মূলত, বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবারকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এমনটি করছেন। আপনারা দেখেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে একটি সাজানো মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হল। আবার এবারের নির্বাচনে আমাদের দলের সবাইকে কারাগারে আটক রেখে তারা নির্বাচন করে ফেলল। তারা এগুলো কেন করছে? কারণ, তারা ভালো করেই জানে অবাধ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাদের একজনেরও জামানত থাকবে না।’
এর আগে, সোমবার (২৪ জুন) অনলাইনের বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। ভার্চুয়াল ওই সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্যই এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা হয়। সভা মনে করে, গণতন্ত্র পুণূরুদ্ধারের জন্য দেশনেত্রীর অবদান, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ সাম্প্রতিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে অতুলনীয়। সভা আরও মনে করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার লক্ষে এই হীন চক্রান্ত করছে এই অবৈধ সরকার।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সভা আরও মনে করে, শুধু মাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী। এই মামলায় জামিন পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার। সভা মনে করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকেরা তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের সুপারিশ করেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে প্রেরণের দাবি জানানো হয়েছে। এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকে দুইবার তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছে।’
সভায় অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। সভায় দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেই লক্ষে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়— জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি জানান, ভার্চুয়াল ওই বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তারেক রহমান।
সারাবাংলা/এজেড/এমও