Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জাতিকে অন্ধকারে রেখে দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি জনগণ মানবে না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুন ২০২৪ ২০:০৬

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে যেসব সমঝোতা ও চুক্তি করেছেন, তার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের নেতারা।

তারা বলেন, দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা, স্মারক ও চুক্তির ব্যাপারে মোটাদাগে কিছু বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হলেও বিশদভাবে পুরো চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক প্রকাশ করা হয়নি। জনগণ জানে না কী ধরনের বোঝাপড়া, সম্মতি ও চুক্তি শেখ হাসিনা করেছেন নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। দেশের সংবিধান অনুযায়ী অন্য দেশের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি বা এমওইউ করতে হলে তা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করা জরুরি। কিন্তু আমরা দেখছি, জনগণকে আড়ালে রেখেই এই ধরনের চুক্তিগুলো করা হয়। আমরা সরকারকে দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, জাতিকে অন্ধকারে রেখে পর্দার আড়ালে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো ধরনের চুক্তি জনগণ মানবে না।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বাম গণতান্ত্রিক জোট কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভা্য় নেতারা এসব কথা বলেন। সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা ডা. জয়দ্বীপ ভট্টচার্য, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির আব্দুল আলী, বাসদ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিখিল দাস, কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শামীম ইমাম, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নেতা রুবেল শিকদারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

জোট নেতারা বলেন, ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেল করিডোর দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। অথচ নেপালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ভেতর দিয়ে ১৮ কিলোমিটার করিডোর ভারত আমাদের দেয়নি। ভারতকে একতরফাভাবে এতবড় করিডোর দেওয়া হলো যে সেটা চালু হলে ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে রেল যাতায়াতের দূরত্ব অনেক কমবে। এতে রেল ব্যবস্থাপনা, মালামাল পরিবহনসহ বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের ওপর ভারত তার প্রভাব আরও বাড়াবে। এমনকি অন্যান্য পণ্যের সাথে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন করলো কি না, তা বাংলাদেশের জানার অধিকার থাকবে কি না তাও নিশ্চিত না। ফলে তাদের পণ্য ও যাত্রীর নিরাপত্তার কথা বলে ভারত সামরিক বাহিনী নিয়োগ করলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।

বাম গণতান্ত্রিক দলের নেতারা আরও বলেন, ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে এ ধরনের ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থা আছে। আমরা বলতে চাই, ইউরোপের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক মোটেও তুলনা করা যায় না। এ অঞ্চলে ভারতের যে ধরনের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা রয়েছে তাতে রেল করিডোর চুক্তি একতরফাভাবে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করা ছাড়া বাংলাদেশের জন্য যে লাভজনক কিছু হবে না, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

জোট নেতারা বলেন, বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, অ্যান্টিডাম্পিংয়ের নামে অশুল্ক বাধা দূর, বাণিজ্য ঘাটতি দূর প্রভৃতি। এসব নিয়ে কোনো আলোচনাই পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ বাংলাদেশ অংশে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের জন্য ভারত টেকনিক্যাল টিম তৈরি করে বাস্তবে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এককথায় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে, এমন কোনো শর্তই শেখ হাসিনার ভারত সফরে আদায় করতে পারেননি।

সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ভারত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেই তাদের পাকিস্তানের দালাল বলে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক, যা শাসকশ্রেণির নির্লজ্জ ব্যর্থতা ও নতজানু নীতিকে আড়াল করার অপপ্রয়াস।

সভায় সাবেক আইজিপি বেনজির আহমদে, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ও এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদ অর্জনের প্রসঙ্গ ছাড়াও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত আনোয়ারুল আজীমের ভারতে হত্যার শিকার হওয়া ও এর সূত্র ধরে সোনা চোরাচালান চক্রের খোঁজ বেরিয়ে আসার প্রসঙ্গগুলোও আলোচিত হয়।

নেতারা বলেন, দেশবাসী মনে করে এমন মানুষ দুয়েকজন নন, শত শত। সে কারণে ভীত হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নজিরবিহীন বিবৃতি দেয়, যা দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তাদের সমর্থন ও প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল। এর মধ্য দিয়ে তারা গণমাধ্যমগুলোকে কার্যত হুমকি দিয়েছে। বামজোট এই বিবৃতিকে পুলিশ প্রশাসনের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা মিডিয়াকর্মীদের হুমকি হিসেবে মনে করছে। গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশন নয়, বরং পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এই বিবৃতিই জনমনে সমগ্র পুলিশ বাহিনীর প্রতি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। সভায় পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এই অনভিপ্রেত বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি জানান নেতারা।

সভা থেকে অবিলম্বে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। পাশাপাশি অবিলম্বে ভারতকে রেল করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে পানিবণ্টন চুক্তি সম্পন্ন করার দাবি জানানো হয়।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বাম গণতান্ত্রিক জোট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর